অবশেষে মুখ খুললেন র‍্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা

আলোচিত র‌্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহার আত্মহননের ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। চট্টগ্রামের র‌্যাব-৭ ক্যাম্পে নিজের কক্ষে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধারের পর আত্মহত্যার প্রাথমিক ধারণা প্রকাশ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা তার শ্বশুরবাড়িতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এবং তুলে ধরেন কিছু চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।

সুস্মিতা সাহার ভাষ্য অনুযায়ী, তার সংসার জীবনে প্রধান অন্তরায় ছিলেন শাশুড়ি। তিনি বলেন, “আমার স্বামী আমাকে ভালোবাসত, কিন্তু শাশুড়ি আমাদের সংসার করতে দেয়নি। ও নিজের ছেলেকে ছোট বাচ্চার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখত। স্বামী যা পরবে, কখন খাবার খাবে, কখন অফিসে যাবে, সবই তার মা ঠিক করতেন।”

তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর থেকেই তিনি স্বামী ও শাশুড়িকে যত্নে রেখেছেন। “প্রথম ৬-৭ মাস আমি শাশুড়ির চুলে তেল দিতাম, গোসল করাতাম, নখ কাটতাম, এমনকি কোন শাড়ি তাকে ভালো লাগবে সেটাও দেখে দিতাম। কিন্তু কোনোদিন তিনি আমাকে বুঝতে চাননি।”

সুস্মিতা জানান, ঢাকার শান্তিনগরে তাদের ফ্ল্যাটে থাকা অবস্থায় তিনি নিজেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন শাশুড়িকে মাস্টার বেডরুম দিতে। “আমি চাইছিলাম তিনি যেন শহরের পরিবেশে সহজে মানিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু পরে বুঝলাম, এতে আমি নিজেই গুরুত্ব হারাচ্ছি।”

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে মানসিক সংযোগ তৈরি হয়নি। ও মায়ের কথা শুনে চলত, আমাকে সময় দিত না। এমনকি আমাদের একান্ত সময়ও ব্যাহত হতো। আমি একটা সময় নিজেকে অপ্রাসঙ্গিক মনে করতে শুরু করি।”

তবে সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয়টি ছিল, পলাশ সাহার মৃত্যুর দিনও তার মা তাকে নিজের হাতে খাওয়ান, এমন তথ্য উল্লেখ করে সুস্মিতা বলেন, “ওর মায়ের কাছে সে যেন এক বাচ্চা ছেলে ছিল। মা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত সে নিত না।”

গত ৭ মে সকালে র‌্যাব-৭ এর বহদ্দারহাট ক্যাম্পে পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, “আমার মৃত্যুর জন্য মা বা বউ কেউ দায়ী নয়। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না।” তিনি তার স্বর্ণালঙ্কার স্ত্রীর জন্য রেখে যাওয়ার ইচ্ছার পাশাপাশি মায়ের দায়িত্ব দিয়েছেন তার দুই ভাইকে।

এই ঘটনায় পলাশ সাহার পরিবার ও স্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসছে এক জটিল পারিবারিক সম্পর্কের চিত্র, যেখানে পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব ও মানসিক চাপের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তদন্তে এ মৃত্যুর পেছনে আরও কারণ উদঘাটন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Share this news on: