এনবিআর বিলুপ্ত, রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনায় দুটি নতুন বিভাগ গঠন

আন্দোলন ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তি করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি পৃথক বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। সোমবার (১২ মে) রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন কর্তৃক অনুমোদিত অধ্যাদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তবে বড় কোনো মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া খসড়া অধ্যাদেশ থেকে আজকের অধ্যাদেশ জারি করা হলো।

গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে আয়কর ও কাস্টমসসহ এনবিআরের সকল শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই অধ্যাদেশ বাতিল করার জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন। তাদের পক্ষ থেকে প্রধান ৭ দফা সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে আজকের জারি করা অধ্যাদেশে অধিকাংশই মানা হয়নি বলে জানা গেছে। ফলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসতে পারে।

এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল-

(১) ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার খসড়ার অনুচ্ছেদ ৪(৩) এ ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

(২) রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদসমূহ বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) এবং বিসিএস (কর) ক্যাডার হতে পূরণের প্রস্তাব করা হলেও খসড়ার অনুচ্ছেদ ৪(৪) এ আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা, পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট, আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা হতে পূরণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন মৌলিক পদসমূহে বর্তমানে দায়িত্বপালনরত রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাগণকে রাজস্ব নীতি বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়নি।

(৩) খসড়ার অনুচ্ছেদ ৯ এ রাজস্ব নীতি বিভাগে জনবল পদায়নে একটি কমিটির কথা উল্লেখ থাকলেও ধারা ৪(৪) এ এমন কোনো কমিটির উল্লেখ নেই। অথচ কমিটি গঠন উল্লেখ করা প্রয়োজন।

(৪) খসড়ার অনুচ্ছেদ ৫ এর দফা (চ) এ রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে “কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ” যুক্ত করা হয়েছে। কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিবীক্ষণের বিধান রাখায় নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম তদারকির সুযোগ থেকে যায়।

(৫) খসড়ার অনুচ্ছেদ ৭(৩) এ “বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তা হতে রাজস্ব আহরণে ন্যূনতম ২০ বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান” এর পরিবর্তে “রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান” এর বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

জারি করা অধ্যাদেশে ওই ধারাগুলো কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

তবে তাদের ৬ নম্বর দাবির প্রেক্ষিতে অধ্যাদেশে অনুচ্ছেদ ৭(৫) এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। খসড়ায় ওই অনুচ্ছেদে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদগুলো প্রশাসন ক্যাডার হতে পদায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তবে জারি করা অধ্যাদেশে প্রশাসনিক পদসমূহ প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের হতে পূরণের সুযোগ রাখা হয়েছে।

রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জারি করা আজকের অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যেহেতু সরকারের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পৃথকীকরণ আবশ্যক; সেহেতু রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধিকরণকল্পে বিদ্যমান কাঠামো পুনর্গঠনপূর্বক রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।

যেহেতু সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির নিকট এটা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আশুব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান। তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করেন।

এদিকে আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে বিসিএস আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা, আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সমন্বয়ে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ করা হয়। তাদের ব্যানারেই সোমবার সকাল ৯টা থেকে এনবিআর, বিভিন্ন কর অঞ্চল, কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট, কাস্টম হাউস থেকে হাজারো কর্মকর্তারা প্রায় নয় ঘণ্টার বৈঠক করে। ওই বৈঠক থেকে মঙ্গলবার অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৮ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তি নয়, যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন বলে দাবি করে বাংলাদেশ ট্যাক্স ল'ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএলএ) এবং ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন (ডিটিবিএ)। তার আগে পর পর দুই সপ্তাহে আয়কর ও কাস্টমসে সংগঠনের অ্যাসোসিয়েশন বিশেষ জরুরি সভা (ইজিএম) হয়। যেখানে থেকে অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি আসে।

এফপি/টিএ


Share this news on: