বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল লাল বলের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বিরাট কোহলি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ও সাবেক ক্রিকেটারদের পরামর্শ ও অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে অবশেষে গতকাল বর্ণাঢ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক। কোহলির অবসর ঘোষণা নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রোহিত শর্মার পাশাপাশি একই দিনে অবসর নিতে চেয়েছিলেন কোহলি। কিন্তু রোহিতকে বাধা না দিলেও কোহলিকে সেই সময় আটকে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। টেস্ট ক্রিকেট থেকে রোহিত অবসর নিয়েছিলেন গত ৭ মে। তার আগের দিন রাতেই পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে হামলা চালায় ভারত। সেই কারণেই বোর্ডের তরফে কোহলিকে অবসর ঘোষণা থেকে বিরত রাখা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
১৪ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১২৩টি ম্যাচে ৯২৩০ রান করেছেন কোহলি। গড় ৪৬.৮৫। এখন থেকে শুধু একদিনের ক্রিকেট খেলবেন কোহলি। রোহিতের অবসর ঘোষণার দিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোহলিও। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে খবর, কোহলিকে কিছু দিন অপেক্ষা করার উপদেশ দিয়েছিল বোর্ড। সেই সময় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত শুরু হয়ে গিয়েছিল। সে কারণেই কোহলিকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল।
পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর জন্যই টেস্ট ক্রিকেট থেকে কোহলি অবসর নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।প্রতিবেদন বলছে, এপ্রিলের শুরুতেই বিসিসিআইকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন কোহলি। যদিও সে সময় বোর্ড তাকে আরও ভাবার উপদেশ দেয়। গত শনিবার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। সোমবার কোহলি বোর্ডকে জানান যে, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় অবসর ঘোষণা করতে চলেছেন। পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর জন্যই টেস্ট ক্রিকেট থেকে কোহলি অবসর নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
শেষ কয়েক বছরে কোহলিকে বেশ কয়েক বার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ইংল্যান্ড যেতে দেখা গিয়েছে। বছরের বেশির ভাগ সময় স্ত্রী আনুষ্কা শর্মা এবং কোহলির সন্তানরা ইংল্যান্ডেই থাকেন। সে কারণে বারবার সেই দেশে গিয়েছেন কোহলি। দুই ফরম্যাট থেকে গুটিয়ে নেওয়ায় এখন থেকে পরিবারকে আরও বেশি সময় দিতে পারবেন তারকা এই ক্রিকেটার।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণায় কোহলি লিখেছিলেন, ‘১৪ বছর আগে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটের নীল ব্যাগি টুপি পরেছিলাম। সত্যি বলতে তখন জানতাম না, ক্রিকেটের এই ফরম্যাট আমাকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। কল্পনাও করিনি। এই ফরম্যাট আমার পরীক্ষা নিয়েছে। আমাকে তৈরি করেছে। আমাকে শিক্ষা দিয়েছে। সারা জীবন এই শিক্ষা বহন করব।’ তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘সাদা পোশাকে খেলার মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত গভীর বিষয় থাকে। শান্ত পরিবেশ, দীর্ঘ সময় খেলা, ছোট ছোট মুহূর্তগুলো কেউ দেখতে পায় না। তবে এগুলো চিরকাল আমার সঙ্গে থাকবে।’
অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না বলেও জানালেন কোহলি। তিনি লিখেছিলেন, ‘ক্রিকেটের এই ফরম্যাট থেকে সরে যাওয়া সহজ নয়। তবু সিদ্ধান্তটা ঠিক মনে হচ্ছে। আমার সব কিছু এই ফরম্যাটের জন্য দিয়েছি। যা আশা করেছিলাম, তার থেকে অনেক বেশি ফিরে পেয়েছি।’ শেষে লিখেছিলেন, ‘কৃতজ্ঞতায় ভরা হৃদয় নিয়ে বিদায় নিচ্ছি। যাদের সঙ্গে মাঠ ভাগ করে নিয়েছি এবং এই যাত্রা পথে যাদের সাহায্য পেয়েছি, সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সব সময় হাসি মুখে নিজের টেস্ট জীবনের দিকে ফিরে দেখব।’
এমআর/টিএ