আজ বাংলা চলচ্চিত্রের 'মিয়া ভাই' কিংবদন্তি ফারুকের মৃত্যুবার্ষিকী

তার পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। তবে তিনি ফারুক নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। ফারুক ছিলেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। ২০২৩ সালের ১৫ মে (আজকের দিনে) মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা।

ফারুক ১৮ আগস্ট ১৯৪৮ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা, গাজীপুর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আজগার হোসেন পাঠান। তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।

তিনি লাঠিয়াল (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি আলোর মিছিল, সুজন সখী, নয়নমনি, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, দিন যায় কথা থাকে, নাগরদোলা, সাহেব, মিয়া ভাই-সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

ফারুক ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে আগমন করেন। তার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন কবরী।

তিনি ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত 'আবার তোরা মানুষ হ' ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত 'আলোর মিছিল' দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন।

লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত তিনটি ছায়াছবি 'সূর্যগ্রহণ', 'মাটির মায়া' ও 'নয়নমনি'।

চলচ্চিত্র তিনটি বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত কালজয়ী উপন্যাস সারেং বৌ অবলম্বনে নির্মিত 'সারেং বৌ' ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত 'গোলাপী এখন ট্রেনে' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

চলচ্চিত্র দুটি নারীকেন্দ্রিক হলেও তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ১৯৭৯ সালে তার অভিনীত দিন যায় কথা থাকে, নাগরদোলা, কথা দিলাম, মাটির পুতুল, সাহেব, ছোট মা, এতিম, ঘরজামাই চলচ্চিত্রগুলো ব্যবসাসফল হয়।

১৯৮০ সালে সখী তুমি কার ছায়াছবিতে শাবানার বিপরীতে শহুরে ধনী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করেন। ১৯৯০ সালে মিয়া ভাই চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে "মিয়া ভাই" হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

চলচ্চিত্রের বাইরে ফারুক ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি গাজীপুরে অবস্থিত নিজের শিল্প প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।

২০০৬ সালে তিনি বাচসাস পুরস্কারে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন।

তরুণ বয়স থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০১২ সালের জুলাইয়ে নায়ক ফারুক এক মাস ধরে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ফারুক দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২০১৪ সালের ৭ই জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন। ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট আবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভীষণ জ্বর নিয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন।

২০২১ সালের ১৫ই মার্চ খিচুনি হওয়ার পরে তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। ১৮ মার্চ অবস্থার উন্নতি হলেও ২১ মার্চ আবার অচেতন হলে আইসিইউতে নেওয়া হয় তাকে।

এরপর তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৫ মে (আজকের দিনে) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দল ঘোষণা করল আর্জেন্টিনা May 15, 2025
img
দেশে নিষিদ্ধ দুই প্রজাতির গাছ May 15, 2025
img
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না: ১২ দলীয় জোট May 15, 2025
img
বিরক্ত করলে কুকুর লেলিয়ে দেবেন নায়লা নাঈম May 15, 2025
img
‘র’ ও ‘আইএসআই’র প্রেম নেই পর্দায়, বদলে যাচ্ছে গল্পের ধারা May 15, 2025
img
চুল খোলা নাচে ট্রাম্পকে স্বাগত জানাল আমিরাতের তরুণীরা May 15, 2025
img
পাকিস্তানকে সমর্থন করায় তুরস্কের ফার্মের ছাড়পত্র বাতিল করল ভারত May 15, 2025
img
বৈশ্বিক সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে ব্র্যাকের মানববন্ধন আয়োজন May 15, 2025
img
সোহানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পরও পিছিয়ে বাংলাদেশ May 15, 2025
img
'তালা খুলে তোমাদের হাতে দিলাম, অন্যায় পেলে আবার তালাবদ্ধ করে দিও' May 15, 2025