টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী 'কালিদাসের সন্দেশ' পেল জিআই সনদ

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কির ঐতিহ্যবাহী ‘কালিদাসের সন্দেশ’ সম্প্রতি পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই (GI) সনদ। শত বছরের পুরনো এই মিষ্টির স্বীকৃতি পেয়ে আনন্দিত পুরো টাঙ্গাইলবাসী। জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে সন্দেশটি এখন বাংলাদেশের একটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো।


বুধবার (১৫ মে) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের হাত থেকে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক এই জিআই সনদ গ্রহণ করেন। স্থানীয় ঐতিহ্য, গুণগত মান ও সুস্বাদুর জন্য সন্দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যা সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এখন আরও গর্বিত টাঙ্গাইলবাসী।


জামুর্কির ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে অবস্থিত 'কালিদাস মিষ্টান্ন ভাণ্ডার'-এ শতবর্ষ ধরে তৈরি হয়ে আসছে এই সুস্বাদু সন্দেশ। দোকানের প্রতিষ্ঠাতা কালিদাস সাহা প্রথাগত পদ্ধতিতে দুধ, চিনি ও পাটালি গুড় ব্যবহার করে তৈরি করতেন এই মিষ্টি। এখন তার পরিবার—ছেলে ও ভাগ্নেরা—তাঁর দেখানো পথেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দোকানের বর্তমান মালিক সমর চন্দ্র সাহা বলেন, “আমাদের সন্দেশ ভালো হওয়ার কারণ হলো আমরা কেবল উৎকৃষ্ট মানের দেশি গরুর দুধ ব্যবহার করি। কোনোভাবেই ভেজাল ছানা বা বাজারের দুধ ব্যবহার করি না। প্রতিটি সন্দেশ যত্ন নিয়ে তৈরি করি, যাতে গুণগত মান অটুট থাকে।” তিনি আরও জানান, তারা কোনো দোকানে সরবরাহ না করে শুধু নিজের দোকান থেকেই বিক্রি করেন, যাতে মানের হেরফের না ঘটে।

সন্দেশ তৈরির কারিগররা জানান, উৎকৃষ্ট দেশি গরুর দুধ সংগ্রহ করে তিন ঘণ্টা ধরে জ্বাল দিয়ে নানা ধাপে তৈরি করা হয় এই সন্দেশ। এতে চিনি, পাটালি গুড় ও এলাচের সঠিক মিশ্রণে সৃষ্টি হয় এক অনন্য স্বাদ ও সুগন্ধ।

ক্রেতারা বলছেন, কালিদাসের সন্দেশ খেলে মুখে তার স্বাদ লেগে থাকে। নিয়মিত যাত্রাবিরতি দিয়ে অনেকেই এই দোকানে এসে সন্দেশ কিনে নিয়ে যান। একজন ক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, “নরসিংদী থেকে ফেরার পথে প্রায়ই কালিদাসের সন্দেশ নিয়ে যাই। আমার সন্তানরা এটি খুব পছন্দ করে।”

জেলা প্রশাসক শরীফা হক বলেন, “ঈদ, পূজা, বিয়ে ও বিভিন্ন উৎসবে এই সন্দেশ অন্যতম উপাদান হয়ে ওঠে। বিদেশি অনেক অতিথিও এই মিষ্টির স্বাদে মুগ্ধ হয়েছেন। প্রতিদিন দোকানটিতে গড়ে লক্ষাধিক টাকার বেচাকেনা হয়। জিআই স্বীকৃতির ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমরা আশাবাদী।”

টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও স্থানীয় পণ্যের স্বীকৃতি অর্জনে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন লক্ষ্য, এই স্বাদ ও গুণমান যুগের পর যুগ ধরে ধরে রাখা।

এমআর


Share this news on:

সর্বশেষ

img
গুমের ঘটনা নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন সালাহউদ্দিন Oct 11, 2025
img
সংবাদকর্মীদের ভোটকক্ষে প্রবেশে কোনো বাধা থাকা উচিত নয় : সাখাওয়াত হোসেন Oct 11, 2025
img
অপরাধীদের বিচার ও বাহিনী সংস্কার ছাড়া গণতন্ত্র অসম্ভব : আখতার Oct 11, 2025
মুনাফিকের ভয়াবহ পরিণতি | ইসলামিক জ্ঞান Oct 11, 2025
যেভাবে ইসলাম প্রচার করবেন | ইসলামিক টিপস Oct 11, 2025
১ মাসের মধ্যে শেষ হবে বিপিএল, থাকবে ৫ টা দল: ইফতেখার মিঠু Oct 11, 2025
বিপিএলে বড় পরিবর্তন, ফরচুন বরিশাল কি থাকবে মাঠে? Oct 11, 2025
ফার্নিচার ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নতুন অধ্যায় শুরু Oct 11, 2025
ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করলেন মারিয়া Oct 11, 2025
রাকসু নির্বাচনে জয়লাভ করলে রাবিতে হামজা চৌধুরীকে আনতে চান প্রার্থী Oct 11, 2025
আমরা কুমিল্লা নামে বিভাগ না নিয়ে ঘরে ফিরব না Oct 11, 2025
img
আল-আকসা মসজিদের খতিবের ওপর ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা Oct 11, 2025
রাকসু নির্বাচনে নারীরা পিছিয়ে কেন? Oct 11, 2025
দেশে ফিরে যা জানালেন শহিদুল আলম Oct 11, 2025
যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক কারখানায় বিস্ফোরণ, নিখোঁজ ১৯ Oct 11, 2025
'বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে জবি ছাত্রদল নেতা হাসিবের নাম' Oct 11, 2025
৫ বছর পর ঢামেক হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট সেবা পুনরায় শুরু Oct 11, 2025
গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে চাই: রাকসু প্রার্থী Oct 11, 2025
যে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেন রাকসুর প্রার্থী! Oct 11, 2025
অভিনব প্রচারণায় রাকসু সিনেট প্রার্থী Oct 11, 2025