বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রান্তিক পোল্ট্রি খাত ও প্রান্তিক খামারিদের উন্নয়নে মোট ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি জানিয়েছে। এই খাতের ১০টি উপখাতে ভর্তূকি, বিনিয়োগ, ঋণ সুবিধাসহ অর্থায়ন হিসেবে বরাদ্দ চায় বিপিএ।
শুক্রবার (১৬ মে) সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) দেশের নিবন্ধিত প্রান্তিক খামারি ও ডিলারদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি জাতীয় সংগঠন হিসেবে এই খাতের টেকসই উন্নয়ন এবং খামারিদের অধিকার সুরক্ষায় একটি সমন্বিত ও বাস্তবমুখী বাজেট সুপারিশ পেশ করছে।
মোট ১০টি খাতে ২ হাজার কোটি টাকা দিলে পোল্ট্রি খাতের পুনরুত্থান, বাজারের স্থিতিশীলতা এবং প্রান্তিক খামারিদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে।
তাতে বলা হয়েছে, বরাদ্দের মধ্যে ফিডে ৪০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ডিম ও মুরগি উৎপাদনে ফিড হলো সবচেয়ে ব্যয়বহুল উপাদান। একটি খামারের মোট উৎপাদন খরচের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ।
ফিডের ক্রমবর্ধমান মূল্য বহন করতে না পেরে প্রতিদিন অসংখ্য খামারি লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই নিবন্ধিত প্রান্তিক খামারিদের জন্য প্রতি কেজি ফিডে নির্ধারিত হারে সরাসরি নগদ ভর্তুকি দেওয়া জরুরি। এতে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাবে, খামার চালু রাখা সম্ভব হবে এবং খামারিরা পুনরায় লাভজনক উৎপাদনে ফিরে আসতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ওষুধ ও ভ্যাকসিনে ২০০ কোটি টাকার সহায়তা দিতে হবে।
রোগবালাই পোল্ট্রি খাতের এক অবিচ্ছেদ্য চ্যালেঞ্জ। অধিকাংশ প্রান্তিক খামারি সময়মতো ভ্যাকসিন ও মানসম্মত ওষুধের অভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হন। এই বাজেটের আওতায় সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ভ্যাকসিন খামারিদের কাছে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে পৌঁছে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন হাব এবং মোবাইল টিকা সরবরাহ ইউনিট স্থাপন করা হবে।
সুদমুক্ত ও জামানতবিহীন ৩০০ কোটি টাকার ঋণ।
প্রান্তিক খামারিদের মূলধন সংকট দূর করে খামার পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণে সহায়তা দিতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ও জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করা হবে। ঋণের জন্য খামার নিবন্ধন এবং নির্দিষ্ট ব্যয় পরিকল্পনা দাখিল বাধ্যতামূলক হবে। ঋণ পরিশোধে ১–২ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সহজ কিস্তি ব্যবস্থা থাকবে, যাতে খামারিরা চাপমুক্তভাবে খামার পরিচালনা করতে পারেন।
সমবায় ভিত্তিক ফিড মিল ও হ্যাচারি স্থাপন ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। বড় কর্পোরেট কোম্পানির ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে প্রান্তিক খামারিদের হাতে উৎপাদনের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দিতে উপজেলাভিত্তিক খামারি সমবায় গঠন করে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ছোট ফিড মিল ও হ্যাচারি স্থাপন করা হবে। এতে খামারিরা মানসম্মত বাচ্চা ও কাঁচামাল সহজলভ্য মূল্যে পেয়ে উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিট স্থাপনে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ চায় সংগঠনটি। পচনশীল পণ্য হওয়ায় ডিম ও মুরগি বাজারজাতকরণে প্রান্তিক খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এই বাজেটের আওতায় উপজেলাভিত্তিক আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিট স্থাপন করে খামারিদের পণ্য সংরক্ষণ ও ফ্রোজেন পণ্য উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করা হবে। এতে পণ্যের মূল্য সংযোজন হবে এবং বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
এসএম/টিএ