তীব্র গরমের সময় যেসব কাজ সুন্নত

গরমের প্রভাব শুধু মানুষের শারীরিক কষ্ট-যন্ত্রণার কারণ হয় না; অন্যান্য জীবজন্তুরও কষ্টের কারণ হয়। এ ছাড়া গরমের তীব্রতা কখনো কখনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থানেও মন্দ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। খাদ্যশস্যের ঘাটতি তৈরি করে। প্রচণ্ড গরমে মুমিনের করণীয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :
অধিক হারে ক্ষমা প্রার্থনা করা

কোরআন-হাদিস থেকে জানা যায়, অতীত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার কারণে আল্লাহপাক রহমতের বৃষ্টি নাজিল করেন; তীব্র গরমে শীতলতা দান করেন।

আল্লাহ বলেন, ‘আর বলছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।’ (আল-কোরআন : সুরা : নুহ-৭১ : ১০-১১)

অতএব, দেশে খরা বা অনাবৃষ্টি শুরু হলে রহমতের বৃষ্টির জন্য একনিষ্ঠতার সঙ্গে ইস্তিগফারের কোনো বিকল্প নেই।পিপাসার্তদের পানি পান করানোতীব্র গরমে তৃষ্ণার্ত মানুষ বা কোনো জীবজন্তুকে পানি পান করানো অধিক উত্তম।

সাদ বিন ওবাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জানতে চাওয়া হলো কোন সদকা বা দান সর্বোত্তম? জবাবে তিনি বলেন, পানি পান করানো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬৮৪)

কাজেই গরমের এই তীব্র মুহূর্তে সাধ্য অনুযায়ী মানুষকে পানি-শরবত পান করানো উচিত।

গাছ লাগানো
গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে বাঁচতে গাছের ছায়ার বিকল্প নেই। গাছ রোপণ করা মহানবী (সা.)-এর একটি সুন্নত।গাছ রোপণ করা, গাছের যত্ন নেওয়া, গাছে পানি সিঞ্চন করা, গাছের ফলফলাদি পাখি বা পশু ভক্ষণ করা—সবই সদকা তথা সওয়াবের অন্তর্ভুক্ত। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যেকোনো মুসলিম ফলদ বৃক্ষ রোপণ করবে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য দানস্বরূপ, যা কিছু চুরি হয় তা-ও দানস্বরূপ, বন্য জন্তু যা খেয়ে নেয় তা-ও দানস্বরূপ, পাখি যা খেয়ে নেয় তা-ও দানস্বরূপ। আর কেউ কিছু (চুরি করে) নিয়ে গেলে তা-ও তার জন্য দানস্বরূপ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৩৮২৪)সুতরাং প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে বাঁচতে গাছ লাগানোর পাশাপাশি এসব সদকা প্রদানে সচেষ্ট হতে হবে।

গ্রীষ্মকাল বা গরমকালকে গালমন্দ না করা
তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই গরমকালকে গালমন্দ করে, অযাচিত বাক্য ব্যবহার করে, যা করা উচিত নয়।রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেন, আদম সন্তান সময়কে গালমন্দ করে। অথচ আমিই সময় (নিয়ন্ত্রণ করি)। আমার হাতেই রাত ও দিন (এর বিবর্তন সাধিত হয়)।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৫৬৬৭)

অতএব, গ্রীষ্মকাল বা গরমকালকে গালি দেওয়া যাবে না। কেননা এই দিন, এই রাত, এই গরম, এই শীত—সবই মহান আল্লাহর নির্দেশে চলমান।
গরমকালে জোহর সালাত বিলম্বে পড়া

ভীষণ গরমের দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) জোহরের সালাত কিছুটা বিলম্বে আদায় করতেন, যেন গরমের তীব্রতা কিছুটা কমে। আবু জার গিফারি (রা.) বলেন, ‘এক সফরে আমরা আল্লাহর নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। একসময় মুয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিলেন। তখন নবী (সা.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার আজান দিতে চাইলে নবী (সা.) বললেন, গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৯)

বৃষ্টির জন্য দোয়া বা সালাত আদায় করা
যখন খরার সৃষ্টি হয় এবং প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে তখন সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টির জন্য সালাত আদায় করার কথা হাদিসে আছে। এমতাবস্থায় এই সালাত আদায় করা সুন্নত। আব্বাদ ইবনু তামিম (রা.) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘(একদা অনাবৃষ্টি শুরু হলে) নবী কারিম (সা.) ঈদগাহের দিকে বের হলেন, বৃষ্টির জন্য দোয়া করলেন, কিবলার দিকে মুখ করলেন, চাদর উল্টালেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।’ (নাসায়ি, হাদিস : ১৫০৯)

পরিশেষে এটাই কাম্য যে প্রচণ্ড গরমে ইসলামী এই নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করব। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন!

এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
আইসিইউতে ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি ডিফেন্ডার May 18, 2025
img
পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: তারেক রহমান May 17, 2025
সেই আইনজীবীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবো: মারিয়া মিম May 17, 2025
ভিয়েতনাম চালু করতে যাচ্ছে ১০ বছরের গোল্ডেন ভিসা May 17, 2025
‘পুশ-ইনউস্কানিমূলক মনে করেন না স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা May 17, 2025
img
ব্রিজের ওপর ১৩ বগি রেখেই চলে গেল ট্রেন May 17, 2025
পিএসএলে মাঠে নামতে মরিয়া সাকিব আল হাসান May 17, 2025
img
‘বলেন তো, আপনার স্বামী কয়জন’, মমতাজকে পিপি May 17, 2025
img
চরবৃত্তির অভিযোগে‌ ভারতীয় ব্লগার জ্যোতি মালহোত্রা গ্রেফতার May 17, 2025
আ. লীগের যারা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য তারা বিএনপিতে যোগ দিতে পারবেন May 17, 2025