ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে পরিবেশ বিধ্বংসী একটি বহুজাতিক তামাক কারখানা সরানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সংগঠনটি বলছে, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, জলাশয় দখল ও দূষণসহ নানারকম পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে থাকা ঢাকার জন্য এই তামাক কারখানা আরও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) সংবাদ মাধ্যমে বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবিরের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত এই তামাক কারখানা থেকে নির্গত হাজার হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। আবাসিক এলাকার ভেতরে এমন প্রাণঘাতী ও পরিবেশ বিধ্বংসী একটি কারখানার অস্তিত্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে এ কারখানা শহরের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হচ্ছে।
বাপা বলছে, তামাক একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পণ্য। তামাক চাষ, কারখানায় উৎপাদন, সেবন এবং এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা– সব কিছুতেই পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি হয়। তামাক পাতার নিকোটিন ও অন্যান্য রাসায়নিক, চাষে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক মাটি, পানি ও বাতাসকে দূষিত করে। এতে উপকারী জীববৈচিত্র্য যেমন পোকামাকড় ও জলজ প্রাণী হুমকির মুখে পড়ে।
তারা আরও বলছে, বিশ্বব্যাপী জলাশয়ের পানিতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সিগারেটের ফিল্টার, যা মাইক্রোপ্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এবং তা পানির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। এসব ফিল্টার থেকে ছড়ায় নিকোটিন ও নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক। শুধু তামাক উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকেই বছরে ৮ কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন CO2 বায়ুমণ্ডলে ছড়ায়। তামাক চাষের কারণে পৃথিবীর ৫ শতাংশ বন ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়েছে, যেখানে প্রতি ৩০০টি সিগারেট তৈরিতে একটি গাছ কাটা পড়ে এবং প্রতি বছর ৬০০ কোটি গাছ নিধন হয়।
বাপার বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত তামাক উৎপাদনের কারণে পৃথিবীজুড়ে ১৫০ কোটি হেক্টর বন হারিয়ে গেছে, যা বার্ষিক ২০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির জন্য দায়ী। মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার বাতাসে তামাক কারখানার নির্গত নিকোটিনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ছড়িয়ে পড়ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ আশপাশের শিক্ষার্থী, শিশু, নারী, বৃদ্ধ– সব শ্রেণির মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।
বাপা প্রশ্ন তুলে বলেছে, কীভাবে এমন একটি কারখানা একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং এর পরিবেশ ছাড়পত্রসহ অন্যান্য অনুমোদন কীভাবে দেওয়া হলো, তা তদন্ত হওয়া জরুরি।
টিকে/এসএন