বিশ্বের অন্যতম বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি কোম্পানি কয়েনবেইস সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় ৪০ কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
কয়েনবেইস জানিয়েছে, হ্যাকাররা তাদের কিছু ঠিকাদার ও কর্মীকে অর্থের বিনিময়ে প্রলুব্ধ করে গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করেছে বা তাতে প্রবেশ করেছে।
এক ব্লগ পোস্টে ক্রিপ্টোকারেন্সি কোম্পানিটি জানিয়েছে, হ্যাকাররা তাদের ১ শতাংশেরও কম সংখ্যক গ্রাহকের তথ্যে প্রবেশ করেছে। এরপর তারা কয়েনবেইসের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে তাদের ডিজিটাল মুদ্রা হাতিয়ে নিয়েছে।
হ্যাকাররা এরপর গ্রাহকদের তথ্য গোপন রাখার বিনিময়ে কয়েনবেইসের কাছে দুই কোটি ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি অর্থ পরিশোধে অস্বীকৃতি জানিয়ে জানিয়েছে, যারা এই হামলার শিকার হয়েছেন, তাদের সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেবে কয়েনবেইস।
এই খবর প্রকাশের পর কয়েনবেইসের শেয়ারের দাম ৪.১ শতাংশ কমে গেছে।
উল্লেখযোগ্য যে, খুব শিগগিরই কয়েনবেইস যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের মর্যাদাপূর্ণ সূচক ‘এসঅ্যান্ডপি ৫০০’-তে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে, যা ক্রিপ্টো শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কিন্তু এই অর্জনের ঠিক আগ মুহূর্তেই সাইবার হামলার শিকার হলো কোম্পানিটি, এমনটাই জানিয়েছে বিবিসি।
বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্প সাইবার অপরাধীদের জন্য বড় লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে—এই হামলা তারই একটি উদাহরণ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেইনঅ্যানালাইসিস-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে ক্রিপ্টো খাত থেকে চুরি হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ২২০ কোটি ডলার।
কোম্পানিটি জানায়, ১১ মে তারা এক ‘অপরিচিত হুমকিদাতা’র কাছ থেকে ইমেইল পেয়েছে।
এক বিবৃতিতে কয়েনবেইস বলেছে, “যেসব গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়ে সাইবার হামলাকারীদের অর্থ পাঠিয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমরা।
“আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, যাতে এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। হ্যাকাররা আমাদের কাছে যে দুই কোটি ডলার মুক্তিপণ চেয়েছে, তা আমরা দেব না।
“এর পরিবর্তে, যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে আমাদের তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন, তাদের জন্য দুই কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছি।”
মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দেওয়া নথিতে কয়েনবেইস জানিয়েছে, এই ঘটনার কারণে তাদের ১৮ থেকে ৪০ কোটি ডলার পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, এই খরচের পরিমাণ মূলত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ এবং স্বেচ্ছায় ফেরত দেওয়া অর্থ থেকে আসবে। তবে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ক্ষতি, ক্ষতিপূরণ দাবি ও অর্থ পুনরুদ্ধারের পরিস্থিতি বিবেচনায় এই হিসাব পরিবর্তিত হতে পারে।
এদিকে, যেসব কর্মী হ্যাকারদের সহযোগিতা করে গ্রাহকদের তথ্য শেয়ার করেছেন, তাদের বরখাস্ত করেছে কয়েনবেইস।
ভবিষ্যতে এমন সাইবার হামলার ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে কোম্পানিটি বলেছে, সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
এসএস/এসএন