২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে টেলিকমিউনিকেশন ও পেইড টিভি খাতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫১ ট্রিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। তবে চলতি বছরে প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা শ্লথ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেটা করপোরেশন (আইডিসি)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে খাতটিতে ব্যয় সামান্য বাড়বে, দাঁড়াবে প্রায় ১ দশমিক ৫৩৫ ট্রিলিয়ন ডলারে।
২০২৪ সালে খাতটির দ্রুত প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি ছিল মূল্যস্ফীতি। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মতো উন্নত অঞ্চলে টেলিকম অপারেটররা পরিষেবার মূল্য বাড়ালেও ভোক্তারা বিকল্পে না গিয়ে মূল সেবার সঙ্গেই থেকেছেন। তুলনামূলকভাবে বেশি ক্রয়ক্ষমতাসম্পন্ন এ অঞ্চলের গ্রাহকদের মধ্যে মোবাইল, ডেটা বা টিভি সাবস্ক্রিপশন কাটছাঁট করার প্রবণতা কম দেখা গেছে। ফলে অপারেটরদের রাজস্বও বেড়েছে।
অন্যদিকে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ছিল কিছুটা ধীর। ২০২২ ও ২০২৩ সালে কোভিড-পরবর্তী সময়ে যেহেতু এ অঞ্চলে প্রযুক্তি গ্রহণ দ্রুত গতিতে বেড়েছিল, তাই ২০২৪ সালে অতিরিক্ত চাহিদার জায়গাটি কিছুটা স্থির হয়েছে। ব্যবসা ও ব্যক্তি পর্যায়ে নতুন সংযোগের চাহিদা কমে এসেছে, যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতির হার কমতে থাকায় আগামীতেও অপারেটরদের পক্ষে পরিষেবার মূল্য বাড়ানো কঠিন হবে। ফলে খরচ স্থিতিশীল থাকলেও আয় বাড়ার গতি কমে যেতে পারে। তবে এ স্থবিরতার মাঝেও টেলিকম খাতকে এগিয়ে নিচ্ছে প্রযুক্তিগত রূপান্তর।
আইডিসি বলছে, বর্তমানে টেলিকম খাত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ফাইভজি ও ফাইবার অপটিক্সের মতো প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। গ্রাহকসেবা উন্নয়ন, নেটওয়ার্ক অপটিমাইজেশন এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে AI প্রযুক্তি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। একই সঙ্গে, কম কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইট প্রযুক্তির (LEO satellites) বিস্তার ইন্টারনেট সংযোগের মানোন্নয়ন ও গ্রামীণ এলাকায়ও সেবা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিশ্বব্যাপী মোবাইল পরিষেবা এখনো সবচেয়ে বড় উপখাত হিসাবে টিকে আছে। বিশেষ করে মোবাইল ডেটা ও মেশিন-টু-মেশিন (M2M) অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। তবে বিপরীতে, মোবাইল ভয়েস কল ও এসএমএস ব্যবহার কমে আসছে, যা খাতটির আয়ের এক অংশে প্রভাব ফেলছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নতুন আমদানি শুল্ক নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও টেলিকম পরিষেবা মূলত স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বেড়ে গেলে অপারেটরদের খরচ বাড়তে পারে, যা শেষ পর্যন্ত গ্রাহকের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও স্মার্ট বিনিয়োগের মাধ্যমেই টেলিকম কোম্পানিগুলোকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির জন্য অপারেটরদের কৌশলগত সহযোগিতা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখাই হবে টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি।
এফপি/এসএন