সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আজ-কালকের মধ্যে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ালে যে আন্দোলন চলছে, তা অন্যভাবে রূপ নেবে।’
রবিবার (১৯ মে) বিকেলে সিলেট নগরীর বালুচরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট) জি কে গউছ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রাসেদুজ্জামান মিল্লাত, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী, এম এ মালেক, সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এবং শাম্মী আক্তার।
সালাহউদ্দিন বলেন, “ঢাকায় রাজপথ ও নগর ভবন ঘিরে আন্দোলন চলছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে—আদালতের রায় অনুযায়ী ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির দায়িত্ব দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারকে সহায়তা করতে বিএনপি সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু তাই বলে আপনারা যা ইচ্ছা তাই করবেন, তা মেনে নেওয়া হবে না। আজ রাতের মধ্যেই ইশরাককে শপথ করাতে হবে, নইলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে যেতে পারে।”
এ সময় আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সরকারিভাবে ১৮ কোটি জনগণ বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা ১৯ কোটির বেশি। এত বিশাল জনসংখ্যার দেশে বিএনপির কি এতই টান পড়েছে যে আওয়ামী লীগ থেকে লোক আনতে হবে?”
তিনি অভিযোগ করেন, “যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, যারা ফ্যাসিবাদ লালন করে, তারা জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগের ডিএনএ-তেই গণতন্ত্র নেই। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করে বাকশাল কায়েম করেছিল, হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে।”
৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেদিনের গণ-অভ্যুত্থানে জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তারা ১৪০০ মানুষ হত্যা করেছে, ২০ হাজারকে পঙ্গু করেছে। অথচ এখনও তাদের অনুশোচনা নেই, ক্ষমাও চায়নি।”
বিএনপিকে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষক উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিএনপি শক্তিশালী না থাকলে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, বহুদলীয় ব্যবস্থা আসতো না। এই দল দুর্বল হলে দেশ দুর্বল হবে।”
তরুণ প্রজন্মকে জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “তাদের সামনে তারেক রহমানের ৩১ দফা তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশি পরিচয়ে যারা বিশ্বাসী, তারাই জাতীয়তাবাদী দলের প্রকৃত সদস্য হতে পারে।”
আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী যেন বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “যারা গুম-খুন, অপহরণে জড়িত, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনও এই দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
সালাহউদ্দিন নেতাকর্মীদের তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্ব গঠনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “দলের প্রাণ হচ্ছে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়। প্রতিযোগিতা থাকা ভালো, তবে তা যেন প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়।”
অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের চার জেলার বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
টিকে/টিএ