আজ ২০ মে বিশ্ব মৌমাছি দিবস

‘মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি/ দাঁড়াও না একবার ভাই।’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের এই কবিতাটি ছোটবেলায় পড়ে নাই এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর। সেই মৌমাছি দিবস আজ। ২০১৮ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ২০ মে বিশ্ব মৌমাছি দিবস পালিত হয়ে আসছে।

১৭৩৪ সালের আজকের দিনে জন্মেছিলেন অ্যান্টন জনসা। স্লোভেনীয় মৌমাছি পালক অ্যান্টন জনসাকে আধুনিক মৌমাছি পালনের জনক বলা হয়। তাই তার জন্মদিনেই পালিত হয় বিশ্ব মৌমাছি দিবস।

তবে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মৌমাছি-পালকদের আবেদনের ভিত্তিতে ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার কর্তৃক ১৫ আগস্ট বিশ্ব মৌমাছি দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর আগস্ট মাসের তৃতীয় শনিবার জাতীয় মৌমাছি দিবস পালন করে থাকে।

মৌমাছি:
মধু, মোম ও ফুলের পরাগায়নের জন্য প্রসিদ্ধ পিঁপড়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত মধু সংগ্রহকারী পতঙ্গবিশেষকে মৌমাছি বলা হয়।

অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত পৃথিবীর সকল মহাদেশে যেখানেই পতঙ্গ-পরাগায়িত সপুষ্পক উদ্ভিদ আছে সেখানেই মৌমাছি আছে। বাংলাদেশে সচরাচর যে মৌমাছি দেখা যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম এপিস ইন্ডিকা।

ফুলে ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহের গুরুদায়িত্ব নিয়ে সব সময় ছুটে বেড়ায় মৌমাছি। কর্মব্যস্ততা, নিয়মানুবর্তিতা এবং পরিশ্রমের যথার্থ উদাহরণ ছোট্ট এই পতঙ্গ। কেবল তা-ই নয়, মৌচাক নির্মাণে মৌমাছির যে শৈল্পিক মনন, বিজ্ঞানমনস্কতা ও দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়, তাতে পতঙ্গটিকে উঁচু স্তরের শিল্পী বললেও কম বলা হয়।

ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় মৌমাছিরা তাদের পা এবং বুকের লোমের ফুলের অসংখ্য পরাগরেণু বয়ে বেড়ায়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে পড়লে পরাগায়ণ ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় ফল।

এভাবে মৌমাছিরা পরাগায়ণের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে ফল ও ফসলের উৎপাদন বাড়ায়।

এ দেশের আবহাওয়া প্রকৃতি অনুযায়ী ক্ষুদে আকৃতির এই মৌমাছি প্রজাতি গাছের কোটরে, দেয়ালের ফাঁটলে, বাক্স পেটরা ইত্যাদি আবদ্ধ স্থানে বাসা তৈরি করে। এদের উৎপাদিত মধুর মান খুবই উৎকৃষ্ট।

প্রত্যেকটি মৌচাকে মৌমাছিরা বসতিবদ্ধ হয়ে একটি বড় পরিবার বা সমাজ গড়ে বাস করে ৷ আকার ও কাজের ভিত্তিতে মৌমাছিরা তিন সম্প্রদায়ে বিভক্ত:

১. রানি মৌমাছি যা একমাত্র উর্বর মৌমাছি

২. ড্রোন বা পুরুষ মৌমাছি

৩. কর্মী মৌমাছি বা বন্ধ্যা মৌমাছি

বিশ্বে প্রায় ২০,০০০ প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে। মৌমাছিরা উপনিবেশে থাকে। প্রতিটি কলোনির রানী, কর্মী এবং ড্রোন রয়েছে। ড্রোনটিতে সমস্ত পুরুষ মৌমাছি থাকে, শ্রমিক মৌমাছি ড্রোনটিকে পরিষ্কার করে। কর্মীরা পরাগ এবং অমৃত সংগ্রহ করে এবং বাচ্চাদের যত্ন নেয়। ড্রোন মৌমাছি কেবল রানী মৌমাছির সঙ্গে সঙ্গম করে। রানী মৌমাছি কেবল ডিম দেওয়ার কাজ করে। মৌমাছিরা গণতন্ত্র অনুসরণ করে। নতুন বাড়ি বাছাই করতে তাদের আলোচনা হয়।

মৌচাক:
মৌচাক হলো মৌমাছির আবাসস্থল। এটি তৈরি হয় মোম জাতীয় পদার্থ দিয়ে। মৌচাকে ক্ষদ্র ক্ষুদ্র ষড়ভূজ প্রকোষ্ঠ থাকে। মৌমাছি এসব প্রকোষ্ঠে মধু সঞ্চয় করে। এছাড়া ফাঁকা প্রকোষ্ঠে মৌমাছি ডিম পাড়ে, লার্ভা ও পিউপা সংরক্ষণ করে। মৌমাছি নিজেই দেহাভ্যন্তরে মোম তৈরি করে। এই মোম প্রকৃতপক্ষে ফ্যাটি এসিডের ইস্টার।

মধু:
মধু হল এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ, যা মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে তৈরি করে। এবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে। এটি উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন সুপেয় একটি ভেষজ তরল। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু স্বাদ, রং, হালকা সুগন্ধ এবং ঔষধিগুণাবলীর জন্য প্রসিদ্ধ।

সাধারণভাবে বলা যায়, মধু হলো লাখ লাখ মৌমাছির অক্লান্ত শ্রম আর সেবাব্রতী জীবনের দান। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের রেণু ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করে পাকস্থলীতে রাখে। তারপর সেখানে মৌমাছির মুখ নিঃসৃত লালা মিশ্রিত হয়ে রাসায়নিক জটিল বিক্রিয়ায় মধু তৈরি হয়। এরপর মুখ হতে মৌচাকের প্রকোষ্ঠে জমা করা হয়।

এসএম/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আরিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করায় বিপাকে সমীর ওয়াংখেড়ে Oct 12, 2025
img
আফগানদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক সিরিজ হার বাংলাদেশের Oct 12, 2025
img
বিমানবন্দর সড়কে নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম! Oct 11, 2025
img
বিএনপি সরকারে এলে জিডিপির ৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করবে : শামা ওবায়েদ Oct 11, 2025
img
জুলাই অভ্যুত্থানের পর সাংবাদিকদের অবারিত স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে: আজাদ মজুমদার Oct 11, 2025
img

সামান্তা শারমিন

শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যাগুলোকে আইডেন্টিফাই করতে হবে Oct 11, 2025
img
রোববার থেকে দেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু Oct 11, 2025
img
মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ইরানের Oct 11, 2025
img
জামায়াত সৎ মানুষদের মনোনয়ন দিয়েছে : এটিএম আজহার Oct 11, 2025
img

জিল্লুর রহমানের বিশ্লেষণ

আবারও ভেল্কিবাজি, রাজনীতিতে কালো ছায়া Oct 11, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিলো চীন Oct 11, 2025
img
গাজায় চালু হচ্ছে ব্যাংকিং কার্যক্রম Oct 11, 2025
অনুশীলনের মাঝেই ৬ কোটি টাকার ক্ষতি রোহিতের Oct 11, 2025
ব্যারিস্টার নুসরাতের হাতে আংটি পরালেন ইশরাক Oct 11, 2025
কি কারণে রাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী? Oct 11, 2025
নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলে ভিন্নমত বিশেষজ্ঞদের! Oct 11, 2025
চাকরি হারিয়ে যা বলছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা! Oct 11, 2025
img
এনসিপি দ্বায়িত্বে এলে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে: সারজিস Oct 11, 2025
img
৩ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল বাজারেও পিছিয়ে বাংলাদেশ Oct 11, 2025
img
আওয়ামী লীগকে দলে ভেড়াতে সব দল উঠেপড়ে লেগেছে : ডিআইজি পলাশ Oct 11, 2025