এটা এক সন্ধিক্ষণের মুহূর্ত’—ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ফার্স্ট-টিম কোচ রেনে মিউলেনস্টিনের এমন মন্তব্যেই ফুটে উঠছে দলটির সামনে আসন্ন ইউরোপা লিগ ফাইনালের গুরুত্ব। বুধবার রাতে স্প্যানিশ শহর বিলবাওতে টটেনহ্যাম হটস্পারের মুখোমুখি হবে ইউনাইটেড।
এক সময় চ্যাম্পিয়নস লিগে সেরা হওয়ার দৌড়ে থাকা ক্লাবটির স্বর্ণযুগ এখন এক অতীত। নিয়মিত বাজে পারফরম্যান্স করা যেনো এখন রেড ডেভিলদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।
এই মৌসুমেও দেখা যায়নি তার ব্যতিক্রম। প্রিমিয়ার লিগে ১৬তম স্থানে থেকে ঘরোয়া মৌসুম শেষ করতে যাওয়া ইউনাইটেডের জন্য তাই এটি শুধু একটি শিরোপার লড়াই নয়, সমালোচনা থেকে বাঁচার উপায়ও বটে।
এমন পরিস্থিতি সামনে রেখে রেনে বলেন, ‘এটা যদি ইউনাইটেড জিতে, তাহলে ভয়াবহ এই মৌসুমে অন্তত একটা শিরোপা ঘরে উঠবে। কিন্তু এই ট্রফিটা না পেলে আগামী মৌসুমে উন্নতির আশা করাটাই অযৌক্তিক।
তিনি আরো বলেন, ‘এই ট্রফি ক্লাবকে কিছুটা আর্থিক স্বস্তি এনে দিতে পারে। না পেলে আমরা ইউরোপিয়ান কোনো প্রতিযোগিতাতেই থাকব না। তখন ইউনাইটেডের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক।’
চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশগ্রহণের সুযোগ মানে শুধু সম্মান নয়, বরং এটি ক্লাবটির জন্য অর্থনৈতিক মুক্তিরও একটি পথ।ফুটবল অর্থনীতি বিশ্লেষক কিয়েরান ম্যাগুয়ের মনে করেন ধনি ক্লাব হিসেবে পরিচিত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইতিহাসে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এটি।
ম্যাগুয়েরের মতে, চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা পেলে শুধুমাত্র টিকিট বিক্রি, সম্প্রচার স্বত্ব ও স্পনসর বোনাস থেকেই ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি আয় হতে পারে ক্লাবটির। আর যদি তারা প্রতিযোগিতায় সামনের দিকে যেতে পারে, তাহলে আয় আরও ৩০-৪০ মিলিয়ন পাউন্ড আয় বাড়তে পারে।
একই কথা টটেনহ্যামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রয়োজনটা আরো বেশি। গত বছরে স্পার্সের বার্ষিক লোকসান ছিল ২৬ মিলিয়ন পাউন্ড, যেখানে ইউনাইটেডের ছিল ১১৩ মিলিয়ন।গত তিন বছরে রেড ডেভিলরা মোট লোকসান করেছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ড।
এতো কিছুর পরও ৬৫১ মিলিয়ন পাউন্ড আয়ের মাধ্যমে গত বছর বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ আয় করা ক্লাব ছিল ইউনাইটেড। তবে ২০০৫ সালে গ্লেজার পরিবারের ঋণ-নির্ভর অধিগ্রহণের কারণে ক্লাবের উপর ১ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি ঋণ এখনো রয়েছে, যার জন্য প্রতি বছর সুদ বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হয়।
এই ঋণ ও আর্থিক চাপের কারণেই ক্লাবটি প্রিমিয়ার লিগের ‘প্রফিট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি রুলস’-এর আওতায় আর্থিক নিয়ম ভাঙার ঝুঁকিতেও রয়েছে।
তাই বলাই যায়, বুধবার রাতের ইউরোপা লিগ ফাইনাল শুধুই একটি ম্যাচ নয়—এটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ।
এমএর/টিএ