বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার জেরে সাময়িক মন্দার মুখে পড়েছে স্বর্ণের বাজার। এপ্রিল মাসে প্রতি আউন্সে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০.০৫ ডলারে পৌঁছানোর পর গত এক মাসে তা প্রায় ১০ শতাংশ কমে এসেছে।
তবে বিশ্ববাজারে মূলধারার বিশ্লেষকরা এখনো স্বর্ণ নিয়ে আশাবাদী। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারাবাহিক ক্রয়, চীনা বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা স্বর্ণের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করে রেখেছে।
সোমবার (১৯ মে) আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ডলারের দুর্বলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান বিষয়ে মুডিজের নেতিবাচক পর্যালোচনার প্রভাবে নিরাপদ বিনিয়োগমাধ্যম হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা আবার বাড়তে শুরু করেছে।
সোমবার স্পট গোল্ডের দাম এক শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ২৩৪.৭০ ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১০ বছরের ট্রেজারি বন্ডের মুনাফা বৃদ্ধির কারণে কিছুটা ঝুঁকিভিত্তিক মনোভাব ফিরে এসেছে বাজারে। তবে স্বর্ণের দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা এখনো অক্ষুণ্ন।
বিশ্ব স্বর্ণ পরিষদের (ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে স্বর্ণভিত্তিক এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে ২০২২ সালের মার্চের পর থেকে। এর মধ্যে চীনা ফান্ডগুলোর সক্রিয়তা ছিল উল্লেখযোগ্য। একইসঙ্গে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) টানা ছয় মাস ধরে তাদের স্বর্ণ রিজার্ভে যুক্ত করে যাচ্ছে নতুন সঞ্চয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৪ সালে স্বর্ণের দাম বার্ষিকভাবে ২৭ শতাংশ বেড়েছিল। চলতি বছর ইতোমধ্যে তা বেড়েছে ২১ শতাংশ।
অ্যাকটিভ ট্রেডসের বিশ্লেষক রিকার্ডো ইভানজেলিস্তা বলেন, ‘বিশ্ব রাজনীতিতে আপাত শান্তির আবহ তৈরি হলেও ঝুঁকি পুরোপুরি কেটে যায়নি। তাই নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ থেকে বিনিয়োগকারীরা সরে আসছেন না।’
স্যাক্সো ব্যাংকের প্রধান পণ্য বিশ্লেষক ওলে হ্যানসেন বলেন, ‘যদিও বর্তমানে কিছুটা সংশোধন চলছে, তবুও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয় ও চীনা চাহিদা এই দরপতনকে স্থায়ী হতে দিচ্ছে না।’
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক তথ্যে দেখা গেছে, উৎপাদক মূল্যসুচক, উৎপাদন এবং খুচরা বিক্রিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এসব সূচক যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভকে চলতি বছর অন্তত দুইবার সুদের হার কমানোর দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিশ্লেষকরা আশা করছেন, প্রথম হার কমার সম্ভাবনা সেপ্টেম্বরেই।
ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেন, ‘ভবিষ্যতে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা একেবারে শেষ হয়ে যাবে এমন নয়। বাস্তব সুদের হার হ্রাস, দুর্বল ডলার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদা-সব মিলিয়ে স্বর্ণের ভবিষ্যৎ এখনো উজ্জ্বল।’
দাম কমলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারাচ্ছে না স্বর্ণ। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বর্ণই রয়ে গেছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম।
এসএম/টিএ