বিধিমালায় পরিবর্তন করায় সারা দেশে ব্যবসা বন্ধের হুমকি ব্যবসায়ী নেতাদের

সারা দেশে ব্যবসা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, বাণিজ্য সংগঠনের বিধিমালা পরিবর্তন করে ‘ইতিপূর্বে’ শব্দ বসিয়ে ব্যবসায়ীদের এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার পায়তারা সফল হতে দেওয়া হবে না। একটি পক্ষকে দূরে রাখার এই কৌশল বাস্তবায়ন করা হলে সারা দেশের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে কঠোর আন্দোলনের নামবো।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে এফবিসিসিআইয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ঢাকার লেডিস ক্লাবে আয়োজিত মতবিনিময়ে সভায় হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন।

এফবিসিসিআই সংস্কারের অংশ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ বিধিমালার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় মতামত বা ভেটিংও দিয়েছে। এখন বাণিজ্য উপদেষ্টার মতামতের পর বিধিমালাটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারির পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রশাসক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যখন এই বিধিমালা নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করেছে, তখন পরপর দুইবার নির্বাচন করে একবার গ্যাপ দেওয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এটা ব্যবসায়ীরা মেনে নিয়েছে। আরো অনেক সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়ে ব্যবসায়ীরা লিখিত প্রস্তাবনা দিয়েছিল এই বিধিমালা প্রণয়নে। তবে বর্তমান প্রশাসককে সহযোগিতা করার জন্য এফবিসিসিআইয়ের যে সহায়ক কমিটি আছে, তারা মিলে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। হঠাৎ করেই ‘ইতিপূর্বে’ শব্দ ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের মেধাবী একটি অংশকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এটা শুধু এফবিসিসি এর ক্ষেত্রে না, অন্যান্য চেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, এখানেই আমাদের প্রশ্ন।

এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু মোতালেব বলেন, সভাপতি ও সহ-সভাপতি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবে, দুইবার বিজয়ী হলে একবার গ্যাপ, এগুলো সবই আমরা মেনে নিয়েছি। আমরা চাই যাদের যোগ্যতা আছে, তারা নির্বাচন করে এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে আসুক। কিন্তু বর্তমান মেরুদণ্ডহীন প্রশাসক এবং সহায়ক কমিটির নামে যেসব ব্যবসায়ী নামধারী এফবিসিসিআইয়ে বসে রয়েছেন, তারা নিজেদের সঙ্গে আইনের মধ্যে জটিলতা তৈরি করেছেন, যা অত্যন্ত গোপনে করা হয়েছে। এটা যেটা হতে যাচ্ছে, তা একটা বেআইনি। এটা একটা ষড়যন্ত্র, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। এই আইন থেকে ‘ইতিপূর্বে’ শব্দ বাদ না দেওয়া হলে সারা দেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে এফবিসিসি এর প্রশাসক ও দালালদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এফবিসিসিআইয়ে এমন একজন প্রশাসক আনা হয়েছে, যিনি নিজেই ছাত্রদের আন্দোলনে চাকরি হারিয়েছেন। তিনি আসলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারবেন না, কারণ বিষয়গুলো তিনি বোঝেন না।
স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব জালাল উদ্দিন বলেন, যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের রুখে দিতেই আমরা একত্রিত হয়েছি। প্রশাসক এবং সহায়ক কমিটিকে প্রয়োজনে টেনে হেঁচড়ে মতিঝিল থেকে বের করতে হবে। আমরা আসলে এফবিসিসিআই ফেরত চাই।

পরিষদের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, এফবিসিসিআইকে বর্তমানে ভারতের হোটেল বানানো হয়েছে। প্রশাসক এবং সহায়ক কমিটির যারা আছেন, তারা সকালে আসেন বিকেলে যান, অনেকের কাছ থেকে চাঁদা তুলেন দুপুরের খাবার খান, ঘুরতে যান। আমাদের কথা হলো প্রশাসক না বুঝলে যেসব ব্যবসায়ী বুঝেন তাদের নিয়ে এফবিসিসিআই চালাতেন। কিন্তু এই বুঝও প্রশাসকের নেই, কারণ তিনি অযোগ্য। তার সঙ্গে যারা আছেন, তারা আসলে এই ভাতের হোটেল ছাড়তে চাচ্ছেন না। প্রজ্ঞাপনের আগ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব, যদি সেখানে সংস্কারের নামে ব্যবসায়ীদের স্বার্থপর পরিপন্থী কোনো কিছু থাকে তবে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।

জানা গেছে, দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের আকার ৮০ থেকে কমিয়ে ৪৬ জনে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৪৬ জনের এই পর্ষদের মধ্যে ১২ জন থাকবেন মনোনীত, বাকিরা ভোটে নির্বাচিত হবেন। পর্ষদে সহ-সভাপতির পদ ছয়টি থেকে কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতিসহ শীর্ষ নেতৃত্বকেও সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতে হবে।

বিধিমালায় যেসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তাতে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনের সাবেক পরিচালকদের অনেকের নির্বাচনের পথ রুদ্ধ হতে পারে। টানা দুইবার পরিচালক হওয়ার পর একবার বিরতি না দিয়ে কেউ আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না—এমন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। বিধানটি শুধু ভবিষ্যতের জন্য নয়, অতীতের জন্যও প্রযোজ্য হবে। সে ক্ষেত্রে গত দুই পর্ষদে থাকা অনেক ব্যবসায়ী আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
টানা দুইবার দায়িত্ব পালন করা সাবেক পরিচালকদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হওয়ায় এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ। তাদের দাবি, সাধারণত আইন বা বিধি ভবিষ্যৎমুখী হয়। বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে পূর্ববর্তী পর্ষদে পরপর দুইবার যারা পরিচালক ছিলেন, তাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এতে ফেডারেশনে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট দেখা দেবে।

ব্যবসায়ীদের এই অনুষ্ঠানে সাবেক পরিচালক হাজী এনায়েতউল্লাহ, নিয়াজ আলী চিশতী, খন্দকার রুহুল আমিন, কাউসার আহমেদ, হাজী আবুল হাশেমসহ অনেকেই বক্তব্য প্রদান করেন।

আরআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আরও এক পাকিস্তানি কূটনীতিককে বহিষ্কার করল ভারত May 22, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে লঞ্চে দুই তরুণীকে মারধোর : সেই যুবকের জামিন নামঞ্জুর May 22, 2025
কেন আন্দোলনে পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীরা? May 22, 2025
ঈদে মেয়ের জন্য একরকম বাজেট ছেলের জন্য আরেক রকম May 22, 2025
img
'বিচার বিভাগের প্রধান জায়গাগুলো বিএনপি'র দখলে থাকায় জুলাই গণহত্যার বিচার অনিশ্চিত' May 22, 2025
img
সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর কোনো কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনও যুক্ত হবে না: সেনাপ্রধান May 22, 2025
img
ছাত্রদলের ১৪ নেতার সাংগঠনিক পদ স্থগিত May 22, 2025
img
আমিরাতের কাছে লজ্জার সিরিজ হার বাংলাদেশের May 22, 2025
img
দাবি না মানা পর্যন্ত এখানে অবস্থান করবো: ইশরাক May 22, 2025
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অভিশপ্ত বই শয়তানের বাইবেল May 22, 2025
চীন আবারও প্রযুক্তির দুনিয়ায় চমক দেখিয়েছে May 22, 2025
ট্রান্সজেন্ডারদের কেউ ওউন করে? May 22, 2025
img
শাহবাগ-দোয়েল চত্বরের সড়ক বন্ধ থাকছে দুদিন May 22, 2025
img
সোফির সঙ্গে সংসার পাতার জন্য ৬৯ কোটির অ্যাপার্টমেন্ট কিনলেন ধাওয়ান May 22, 2025
ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে খুলতে হচ্ছে হিজাব : ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ May 22, 2025
img
মুস্তাফিজদের দিল্লিকে বিদায় করে প্লে-অফে মুম্বাই May 22, 2025
img
অটোচালককে মারধরের পর থুতু চাটালেন সাবেক ছাত্রদল নেতা May 22, 2025
ইরানে গোয়েন্দা জালে চরম বিপদে নেতানিয়াহু সরকার May 22, 2025
img
টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যার আশঙ্কা May 22, 2025
ইশরাকের ইস্যুতে কি সরকারবিরোধী আন্দোলনের পথে হাঁটছে বিএনপি May 22, 2025