সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার খবর নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। বলা হয়েছে মেজর সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও উপপরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে, এমন খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে বিষয়টি গুজব বলে জানিয়েছে কারা অধিদপ্তর।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়েছে যে ওসি প্রদীপের ফাঁসি আগামী সাত দিনের মধ্যে কার্যকর হতে যাচ্ছে।
তবে ফ্যাক্টওয়াচ নামক তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধানে প্রমাণ করেছে যে, এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
জানা যায়, কোনো মামলায় বিচারিক আদালতে রায়ে আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা এসব আপিল ও আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
সিনহা হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছে, যা একই বছর ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
অন্যদিকে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে আসামিরা পৃথক আপিল ও জেল আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানির পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) প্রস্তুত করতে হয়। পেপারবুক প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে প্রধান বিচারপতি মামলাটি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগির হোসেনের সমন্বয়ে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে নির্ধারণ করে দেন।
এই দ্বৈত বেঞ্চে ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।
সংস্থাটি বলছে, রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার বলেছেন, মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি অব্যাহতভাবে চলছে। এ বিষয়ে গত ২৩ মে শুনানি শুরু হয়ে এ পর্যন্ত মোট ১৪ দিন শুনানি হয়েছে। এদিকে সাত দিনের মধ্যে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের আদেশ নিয়ে যে সংবাদ ছড়িয়েছে, তা সঠিক নয়।
এ ছাড়া রীতি অনুযায়ী, যেকোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সব বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে তার পরিবারের সদস্যদের তলব করা হয় এবং শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
সঙ্গত কারণে এ সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্টগুলোর তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে ফ্যাক্টওয়াচ।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হন।
এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। এরপর ৫ আগস্ট মেজর সিনহার বোন টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ এবং উপপরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১৫ জন অভিযুক্তের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাতজনকে খালাস দেন আদালত।
আরএম