খুব শীঘ্রই নতুন জীবনে পা রাখতে চলেছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী। সম্ভবত বছরশেষে সাতপাক ঘুরবেন। পাত্র বলিউডের জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার সুমিত অরোরা। গত মাসে বাগদান সেরেছেন তারা। ভালবাসার এমন আবহে একটু কি বেসুরো ঋতাভরী অভিনীত সাম্প্রতিক দুটো চরিত্র? একটি হইচই ওয়েব প্ল্যাটফর্মের নতুন সিরিজ় ‘শাখাপ্রশাখা’য় দেখা যাবে। অন্যটি মৈনাক ভৌমিকের ‘বাৎসরিক’ ছবিতে। কাকতালীয় ভাবে দুটোতেই বিধবার চরিত্রে তিনি! প্রথমটিতে অভিনেত্রী ‘নন্দিতা’, দ্বিতীয়টিতে তিনি ‘বৃষ্টি’।
এখনও হিন্দু সমাজে নানা সংস্কার। বিয়ের আগে নানা নিয়মনীতির রেওয়াজ। শুভ-অশুভের বাছবিচারও থাকে। বিয়ের আগে পর পর এই ধরনের বিশেষ চরিত্রে অভিনয় কোনও ভাবে কি ঋতাভরী বা তার পরিবারের সদস্যদের মনে কোনও ছায়া ফেলেছে? দিনের শেষে তিনিও তো রক্তমাংসের মানুষ!। ঋতাভরী উড়িয়ে দিয়েছেন সেই সম্ভাবনা। তাঁর কথায়, “জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে— তিন বিধাতা নিয়ে।
কোনওটাই কম সত্যি নয়। তাই অতটা চুলচেরা বিশ্লেষণ করিনি।” অভিনেত্রী শুধুই এটুকু বলে থামেননি। তার উপলব্ধি আরও গভীর। বলেছেন, “আমাদের দেশে অতীতে ১০-১২ বছর বয়সি মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হত। তারা বিধবা হত। সতীদাহের নামে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হত তাদের। এই দেশে এখনও যোটক বিচার করে, কুণ্ডলী মিলিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। এ সমস্ত যদি আমরা ফিরে দেখি তা হলে বলব, শিক্ষা আমাদের এ সমস্ত থেকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে।”
পাশাপাশি এ-ও জানাতে ভোলেননি, তিনি অভিনেতা। পেশাজনিত কারণে, যে কোনও চরিত্রে অভিনয় করবেন। তার মানেই কি তিনি সেটা হয়ে গেলেন? উদাহরণ হিসাবে ঋতাভরী বলেছেন, “ধরুন, একটি ছবিতে আমি ডাকাত। তার মানে কি আমি ডাকাত হয়ে গেলাম? সেটা তো না।” তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন রমেশ সিপ্পির ‘শোলে’ ছবির কথাও। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জয়া বচ্চন বিধবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
এই কথা অস্বীকার করেননি ঋতাভরী। তার মতে, “অবশ্যই রাখে। যেমন রেখেছিল ‘বহুরূপী’র ‘পরি’। যার মানসিক সমস্যা ছিল। ওই চরিত্রে অভিনয় করতে করতে আমি সেই মেয়ের ব্যথা অনুভব করেছিলাম। ‘ফাটাফাটি’ ছবিতে ‘ফুল্লরা’র জন্যও মনখারাপ করত। আবার ‘নন্দিতা’ বা ‘বৃষ্টি’র কষ্টও মন ছুঁয়ে যায়। প্রথম চরিত্রটি একা বিধবা মায়ের লড়াই। দ্বিতীয়টি শিক্ষিতমনস্ক নারী। যে সাথিহারা হয়ে ভেঙে পড়েছে।”
তিনি এই দুটো চরিত্র অভিনয় করতে গিয়ে উপলব্ধি করেছেন, “বিধবারও রকমফের রয়েছে। কেউ বিধবা হয়ে স্বামীর সম্পত্তি পেয়ে ধনী। কেউ আবার সমাজে, আত্মীয়ের কাছে একঘরে।” তার মতে, এখনও স্বামী মারা গেলে তার দায় মেয়েদের কাধে বর্তায়। তার মানে এটা নয়, এই চরিত্রগুলো তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।
অভিনেত্রী তার নিজস্ব সত্তাকে খুবই ভালবাসেন। যত্ন নেন। ঋতাভরীর উপরে তাই ছায়া ফেলতে দেন না কাউকে। আবার নিজের অভিনেত্রীসত্তা নিয়ে প্রচ্ছন্ন গর্বও করেন। তার উপলব্ধি, “এখন আর আমায় কেউ সহজ চরিত্র দেন না। যেখানে যত পরিশ্রম সেখানেই ঋতাভরী। আমারও ভাল লাগে। এটাই আমার অর্জন।”
আরএম