হার্ভার্ডে ‘সাময়িক স্বস্তি’ পেল বিদেশি শিক্ষার্থীরা, আইনি লড়াই অব্যাহত

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা সংক্রান্ত একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেছে। তবে মামলাটি এখনও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি, এবং আইনি লড়াই চলমান রয়েছে।

শনিবার (২৪ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

বিচারক অ্যালিসন বুরোস শুক্রবার এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তকে সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। হার্ভার্ডের অভিযোগ, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাদের ‘একাডেমিক স্বাধীনতা’র ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, নীতিটি কার্যকর হলে প্রায় ৭ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়তেন। হার্ভার্ড বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া হার্ভার্ড তার পরিচয় হারায়।’
এই মামলার প্রেক্ষিতে পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ ও ২৯ মে। বিচারক বুরোস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তাৎক্ষণিক ক্ষতির মুখে রয়েছে’ — এই ভিত্তিতে তিনি দুই সপ্তাহের জন্য ভিসা বাতিলের আদেশ স্থগিত করেছেন।

এদিকে, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেছেন, নির্বাচিত নয় এমন এক বিচারক সরকারের অভিবাসন ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, হার্ভার্ড ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ ছড়াচ্ছে এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করছে — যদিও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, তারা ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের যেকোনো বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে। হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেন, ‘সরকার বারবার প্রতিশোধমূলক নীতি গ্রহণ করে আমাদের স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে।’

বিচারকের এই অস্থায়ী আদেশে হার্ভার্ডের প্রায় ৭,০০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সাময়িকভাবে স্বস্তি পেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি জানায়, এই নীতির ফলে শিক্ষার্থীদের ট্রান্সফার হতে বাধ্য করা হতো, যা মার্কিন সংবিধান এবং ফেডারেল আইনের লঙ্ঘন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং রিপাবলিকান দল দীর্ঘদিন ধরে অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বামপন্থি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছে। হার্ভার্ড ইতিমধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান বন্ধের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে।

বিচারক অ্যালিসন বুরোস, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার মনোনীত, দুই সপ্তাহের জন্য নীতিটি স্থগিত করেন এবং ২৭ ও ২৯ মে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন। এদিকে হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচিত নয় এমন একজন বিচারকের কোনো অধিকার নেই অভিবাসন ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিতে হস্তক্ষেপ করার।

এই মামলাটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি বড় প্রতিরোধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একদিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও একাডেমিক স্বাধীনতা, অপরদিকে জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক চাপ—এই দ্বন্দ্ব ভবিষ্যতে আরও জোরালোভাবে সামনে আসতে পারে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে’ May 24, 2025
img
পরেশ রাওয়ালের সিদ্ধান্তে কাঁদলেন অক্ষয় May 24, 2025
img
মুন্নী সাহা ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ৩৫ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ May 24, 2025
img
আমাদের ২০ হাজার নাগরিক নিহত হয়েছে : জাতিসংঘে ভারত May 24, 2025
img
দেশজুড়ে পুলিশের অভিযানে ১৭৪৪ জন গ্রেফতার May 24, 2025
img
কিছু মানুষের গাদ্দারির কারণে জুলাইয়ের ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে May 24, 2025
img
হার্ভার্ড থেকে বিশ্ব নেতৃত্ব! নন্দিতদের সাথে আছে নিন্দিত নেতানিয়াহুও May 24, 2025
img
নকল-প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এইচএসসি পরীক্ষায় ৩৩ নির্দেশনা May 24, 2025
img
বিএনপি ঘরে বসে থাকলে দেড়শ বছরেও হাসিনার পতন হতো না : খায়ের ভূঁইয়া May 24, 2025
img
কীভাবে মৃত্যু হলো মুকুল দেবের, মুখ খুললেন ভাই রাহুল দেব May 24, 2025
দুই ছাত্র উপদেষ্টার সাথে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই: নাহিদ ইসলাম May 24, 2025
সাবেক আইনমন্ত্রীর সহযোগী তৌফিকার ৫৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ May 24, 2025
img
প্রশান্ত মহাসাগর ছোট হয়ে জন্ম নিতে পারে নতুন সুপারমহাদেশ ‘আমাসিয়া’ May 24, 2025
তওবা করে সব ছেড়েছিলেন শাবানা! May 24, 2025
চা দিবসে চুমুর স্মৃতি রোমন্থন রাহুলের May 24, 2025
img
তিনটি গরু কিনলেই ওমরাহ্ ফ্রি May 24, 2025
img
আ.লীগ নেতার সভাপতিত্বে বিএনপির কর্মিসভা May 24, 2025
img
কুড়িগ্রামে ১২ বাংলাদেশিকে বিএসএফের পুশ-ইন May 24, 2025
img
নাতির বয়সি উপদেষ্টাদের দিয়ে অভিজ্ঞ সরকার হয় না: রিজভী May 24, 2025
‘আগামীর শেয়ার বাজারে সব ঘাটতি বিএনপি পূরণ করবে’ May 24, 2025