বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে চার শতাধিক মানুষকে পুশ ইন করে বাংলাদেশের ভেতরে পাঠিয়েছে ভারত। যাদের পুশ ইন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে যেমন রোহিঙ্গা রয়েছে, তেমনি রয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকও যারা অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে।
ভারত থেকে ঠেলে বাংলাদেশে পুশ ইন করার সময় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)-এর সামনে পড়লে কী বলতে হবে তাও শিখিয়ে দিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর সদস্যরা।
শনিবার (২৪ মে) প্রকাশিত বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন এসব তথ্য জানা যায়।
গত শনিবার ভোরে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও সীমান্তের ভেতরে ভারত থেকে পুশ ইনের মাধ্যমে এসে বিজিবির হাতে আটক হয়েছেন জাহানারা খাতুন।
জাহানারা খাতুন বলেছেন, ভারত থেকে ঠেলে বাংলাদেশে ঢোকানোর সময় বিজিবির সামনে পড়লে ‘কী বলতে হবে সেটাও শিখিয়ে দিয়েছিল’ বিএসএফ সদস্যরা।
তিনি বলেন, ‘ওরা বলল যে, যদি ধরা পড়ো তাহলে বলবা যে আমরা ইন্ডিয়া যাচ্ছিলাম, সীমান্তে বিএসএফ তাড়া দেওয়ায় আবার চলে আসছি।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘বিএসএফ আমাদের বলেছে যে, আমরা দুটো গুলি মারব। গুলি মারার পরে তোমরা সব দৌড় মারবা। তো ওরা দুটো গুলি মারে। তখন আমরা সবাই ভেগে দৌড় মারি। সামনে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ি।’
জাহানার খাতুনের সঙ্গে গত শনিবার একইদিনে পুশ ইনের পর বিজিবির হাতে আটক হন যশোরের নুরুন্নাহার, যিনি তিন বছর আগে ভারতের মুম্বাইয়ে গিয়েছিলেন কাজের খোঁজে।
নুরুন্নাহার বলেছেন, ‘আমার এলাকার একজনের সঙ্গে মুম্বাই গিয়েছিলাম। সেখানে রুম ভাড়া করে থাকতাম। কাজ করতাম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে।’
তার বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে, গেলো এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি মুম্বাইয়ে ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হন।
সেখানে ১৫ দিন আটক রেখে যাচাই-বাছাইয়ের পর বিমানে করে তাদের পাঠানো হয় কলকাতা। এরপর কলকাতা থেকে বাসে করে আনা হয় বাংলাদেশ সীমান্তে।
গত ১৭ মে ভোররাতে তাদের ঢুকিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও সীমান্তবর্তী এলাকায়।
নুরুন্নাহার বলছিলেন, ‘আমাকে রুম থেকেই সিআইডি ধরছিলো। এরপর যাচাই-বাছাই করে। আমার বাড়ি কোথায়, কবে আসছি এই জিজ্ঞাসা করে। পরে মোবাইলে আমার বাংলাদেশের ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখাই। তারপর আমাকে কলকাতা হয়ে সীমান্তে নিয়ে আসে।’
নুরুন্নাহার ও জাহানারাসহ ১৭ জনকে একসঙ্গে সীমান্তে ঠেলে দেয় বিএসিএফ। বলেন নুরুন্নাহার বলেন, ‘মোট তিনটা গাড়ি ছিল। দুইটা গাড়ির লোকদের অন্য দিক দিয়ে পার করেছে। আর আমাদের পার করেছে আরেক দিক দিয়ে। ভূট্টা খেত, জঙ্গল, পানি এই সবকিছুর মধ্যে দিয়ে পায়ে হেঁটে অন্ধকারের মধ্যে আমরা এগুতে থাকি। আমরা তো এখানকার কিছুই চিনি না। পরে একসময় বিজিবি আমাদের দেখতে পেয়ে আটক করে।’
আরএ/এসএন