জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় জামায়াত নেতা আসামি, বাদী বললেন ‘ভুল হয়েছে’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট নোয়াখালীর চাটখিল থানা থেকে লুট করা অস্ত্রে প্রাণ হারানো মো. ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজের মৃত্যুর ৯ মাস পর আদালতে দায়েরকৃত মামলায় আসামির তালিকায় নাম উঠে এসেছে এক স্থানীয় জামায়াত নেতার। এ নিয়ে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন ওই জামায়াত নেতা। মামলার বাদী ইমতিয়াজের বাবা হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, এটি একটি ‘ভুলবশত’ ঘটনা।

নিহত ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ চাটখিল উপজেলার হাটপুকুরিয়া ঘাটলাবাগ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ওয়ারী মিয়া বেপারী বাড়ির মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে।

জানা যায়, বুধবার (২১ মে) চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন হাবিবুর রহমান। আমলি আদালত-৭-এর বিচারক মামলাটি গ্রহণ করেন। মামলায় সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিমসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়। বিচারক, এরপর চাটখিল থানায় পূর্বে এসংক্রান্ত কোনো মামলা হয়েছে কি না তা আগামী সাত দিনের ভেতর রিপোর্ট জমা দিতে বলেন।

মামলার আবেদন সূত্রে জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম, সাবেক পৌর মেয়র মোহাম্মদ উল্যা, ভিপি নিজাম উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৫৭ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮ নম্বর আসামি হিসেবে রয়েছেন জামায়াতের পরকোট ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সেক্রেটারি মো. সাইফুল্লাহ মানিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে ২৭ মার্চ ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজকে শহীদের স্বীকৃতি ও ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র দেওয়ায় ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গেজেটভুক্ত শহীদের তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। ফের মামলা বাণিজ্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরের অভিযোগ তুলে জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে মামলা নিয়ে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চাটখিল উপজেলার প্রতিনিধি গোলাপ হোসেন ও তাহা ইয়াসিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা দিন দিন অবাক হচ্ছি। গেজেট বাতিলের জন্য আমরা আবেদন করেছি, কিন্তু সেই গেজেট দিয়ে মৃত্যুর ৯ মাস পর মামলা করেছে। আমরা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যসহ নানান অভিযোগ পেয়েছি। আমরা অবাক হয়েছি, কীভাবে একজন আত্মঘাতী ব্যক্তি শহীদ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়। আবার জেলা প্রশাসক ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র তুলে দেন। আমরা বিষয়টির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ইমতিয়াজের নাম কোথাও ছিল না। তারপরও কীভাবে এতদূর গড়িয়েছে তার জন্য তদন্ত করা দরকার। এখনো আহত যোদ্ধারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কিন্তু এভাবে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা ইমতিয়াজের পরিবারকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

জামায়াত নেতা মো. সাইফুল্লাহ মানিক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম স্টেকহোল্ডার। দীর্ঘদিন আমরা জুলুমের শিকার হয়েছি। আজ আবার মিথ্যা মামলার শিকার হলাম। ইমতিয়াজের মৃত্যু নিয়ে নানান কথা প্রসিদ্ধ আছে। থানার লুটকৃত অস্ত্র দিয়ে সে আত্মঘাতীভাবে নিহত হন। দীর্ঘ ৯ মাস পর আমাকে পরিকল্পিতভাবে জড়িয়ে মামলার আসামি করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার এবং জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে গাদ্দারি। আমি ন্যায়বিচার কামনা করছি এবং মিথ্যা এ মামলার আবেদনের জন্য বাদীর শাস্তি দাবি করছি। যেন কেউ জুলাই আন্দোলন নিয়ে গাদ্দারি না করতে পারেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মামলার বাদী হাবিবুর রহমান আসামির তথ্য ও ছবি বিস্তারিত বলতে পারেননি৷ তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ও আমার পরিবার দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলাম। জামায়াত নেতা সাইফুল্লাহকে আমি ভালোভাবে চিনি না। সম্ভবত আমার ভুল হয়েছে। আমি আদালতে বিষয়টি জানাবো। জামায়াত নেতাকে আসামি করায় আমি দুঃখিত।

এ মামলার শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়বেন বলে জানান চাটখিল উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মহিউদ্দিন হাসান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আন্দোলন করলাম, আবার আমরাই আসামি হলাম—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এটার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই মামলার কুশীলব কারা তা বের করা হবে। আমরা এ মামলার শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়বো।

এফপি/এসএন  

Share this news on:

সর্বশেষ

জয়া-রুনাকে নিয়ে চুমকির বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া নেটপাড়ায় Dec 14, 2025
দুই বছর অপেক্ষার পর ধামাকা এন্ট্রি দিয়ে ফিরলেন ফারিয়া Dec 14, 2025
সমুদ্রসৈকতে মিমের আবেদনময়ী লুক নেটমহলে তোলপাড় Dec 14, 2025
মেসির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন মমতা ব্যানার্জি Dec 14, 2025
img
‘প্রতি সপ্তাহে কোরিয়া যাই’- ফের আলোচনায় তান্যা মিত্তল Dec 14, 2025
img
শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা : প্রধান উপদেষ্টা Dec 14, 2025
img
হানিমুন শেষে উচ্ছ্বসিত সামান্থা, স্বামীর সঙ্গে খুনসুটির মুহূর্ত ভাইরাল Dec 14, 2025
img
মায়ের পদবি নয়, নিজের নামেই অন্বেষা Dec 14, 2025
img
মেসিকে না দেখার ক্ষোভে উত্তাল জনতা, উদ্যোক্তাকে তোপ টলিউডের Dec 14, 2025
img
অপরাধের রাজনৈতিক ট্যাগ প্রকৃত আসামিকে আড়াল করে : তাহেরি Dec 14, 2025
img
খালেদা জিয়া রাজনৈতিক অঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তী : কবীর ভূইয়া Dec 14, 2025
img
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবিচল সাহস দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় : রাষ্ট্রপতি Dec 14, 2025
img
প্রথম ডেটে সারারাত পিয়ানো বাজিয়েছিলেন বীর, নায়িকার মন্তব্য Dec 14, 2025
img
হাদির ওপর হামলা নির্বাচন বানচালের গভীর ষড়যন্ত্র : শেখ বাবলু Dec 14, 2025
img
হাদিকে গুলি করা দুর্বৃত্ত গোয়েন্দাদের নজরে! Dec 14, 2025
img
ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমের দুঃখ প্রকাশ Dec 14, 2025
img
চট্টগ্রামে সোমবার অনুষ্ঠিত হবে হৃদরোগ কনফারেন্স Dec 14, 2025
img
ঢাকা বিভাগের ইজতেমায় ক্রিকেটার মিরাজ Dec 14, 2025
img
অন্যের হাসিতেই জীবনের পরম সার্থকতা দেখেন গায়িকা Dec 14, 2025
img
পার্শ্ববর্তী দেশের উস্কানিতে আ.লীগের দালালরা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে : খোকন Dec 14, 2025