অর্থনৈতিক সংস্কার শেষে নতুন উচ্চতায় উঠবে শেয়ারবাজার:প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার, বিচার কার্যক্রম এবং নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। অর্থনৈতিক সংস্কার চলছে। সংস্কার শেষে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আমরা চেষ্টা করছি একটা ব্রডার ইকোনমিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে আমাদের বাংলাদেশের ইকোনমি টেক অফ করে। ইকোনমির গ্রোথ যদি টেক অফ করে তাহলে এর প্রভাব শেয়ার মার্কেটে পড়বে। যদি সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা খুব ভালো হয়, আশা করা যায়, বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেট একটা নতুন উচ্চতায় উঠবে খুব দ্রুত। এছাড়া নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে গেছে, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে।
 
রোববার (২৫ মে) পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টকে তিনি এ কথা বলেন।সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
 
‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ডাকাতদের আড্ডা হয়ে গেছে। এখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কেবল প্রতারণার শিকার হয়েছেন, পুঁজি হারিয়েছেন। অতীতে যারাই পুঁজিবাজারের সংস্কারে দায়িত্ব নিয়েছেন, তারাই বিভিন্ন গোষ্ঠীর তাঁবেদারি করেছে,’ বলে উল্লেখ করে শফিকুল আলম। তিনি বলেন, একটা বড় বিষয় হচ্ছে যে, ঐতিহাসিকভাবে বিএসইসিতে বা বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের যে সংস্কারগুলো যারা করেছেন, তারা সবাই গোষ্ঠী স্বার্থের দিকে তাকিয়েছিলেন। এই গোষ্ঠীটা একটা পারপাস সার্ভ করছে, ওই গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ এসে আরেকটা পারপাস সার্ভ করেছে। ফলে দেখা গেছে যে, যারা বড় বড় প্লেয়ার, তারা সবসময় বেনিফিটেড হয়েছেন। জেনারেল, যারা খুব ছোট ট্রেডার, যারা সেভারস, বলা যায় শেয়ার মার্কেটে শেয়ার কিনে সেভিং করছেন, তারা সবসময় বেশিরভাগ সময় বেনিফিটেড হন নাই বা চিটেড হয়েছেন। ম্যানিপুলেশনের শিকার হয়েছেন।

পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই মিটিংয়ে এই ধরনের কথা, মানে এই ডিসকাশনটা খুবই জোরালোভাবে এসেছে যে, আসলে আমরা কেন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এটার কারণ হচ্ছে, পুরো শেয়ার মার্কেটটা হয়ে গেছে ডাকাতদের আড্ডা। পুঁজিবাজারে এই ডাকাত গেলে আরেকটা ডাকাত আসছে।
 
শফিকুল আলম বলেন, পুঁজিবাজার সংস্কারের জন্য আপনি যাকে নিয়ে আসছেন, সে আরেকটা ডাকাত। তো এই জায়গাতে রিফর্মের জায়গায় প্রফেসর ইউনূস বলছেন, এখানে খুব স্ট্রং এবং খুব গভীর রিফর্ম করতে হবে। এই রিফর্মটা যে করবে, তারা হচ্ছে এই গোষ্ঠী স্বার্থের অনেক দূরের লোক। তারাই এসে করবে। তারা নির্মোহভাবে রিফর্ম করবে। পুরো বিশ্বেই শেয়ার মার্কেটের খুব গভীর রিফর্ম হয়। ভালো জায়গায় যায়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে যে, যারা রিফর্ম করতে চান, তারা আসলে আরেকটা ধান্দাবাজ গ্রুপ।

তিনি যোগ করেন, এজন্য প্রফেসর ইউনূস গত মিটিংয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন যে, সেট অফ ফরেন এক্সপার্ট, যারা শেয়ার মার্কেট কীভাবে গ্লোবালি রিফর্ম করা যায়, গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে আনা যায়, সেটাই যেন খুব দ্রুত হয়, তাদেরকে নিয়ে আসা হয়। এটার জন্য একটা তিন মাসের টাইমলাইন দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে তারা এসে শেয়ার মার্কেটের কী কী করণীয়, সেটা তারা বলবেন এবং সে অনুযায়ী খুব দ্রুত অ্যাকশন নেওয়া হবে।

এর ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার কোনো গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি থাকবে না উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, কোনো গোষ্ঠী যেন মনে না করেন যে, এখান থেকে আমি আমার মতো করে টাকা বানাব। বছরের পর বছর হয়েছে, আমরা দেখেছি, আমাদের আশেপাশে যারাই একটু শেয়ার মার্কেটে ইনফ্লুয়েনশিয়াল পিপলের আশেপাশে ছিলেন, তারা সবাই কোটিপতি হয়ে গেছেন। সেই জায়গাটা যাতে না হয়, অর্ডিনারি শেয়ারহোল্ডারের জন্য ইন্টারেস্টটা প্রটেক্ট হয়। এই জায়গাটা প্রফেসর ইউনূস বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন।

ব্যাংকিং খাতকে গহ্বর থেকে টেনে তোলা হচ্ছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা একদম দুর্বল ছিল। স্যার (ড. ইউনূস) বলেন যে, ব্যাংকিংয়ের অবস্থা ভূমিকম্পের মতো। সবকিছু লন্ডভন্ড অবস্থা। সেখান থেকে আমরা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে একটা গহ্বর থেকে তুলে এনে পাহাড়ে ওঠানোর চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ হলো কারেন্সি ফ্লোট করা হয়েছে। কিন্তু টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। এটা নির্দেশ করে যে, সংস্কার ভালো সংকেত দিচ্ছে।
সরকারের মেয়াদ শেষ হলে বিদেশি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হবে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, এটার দুইটা কারণ আছে। একটা হচ্ছে, আমরা চিটাগাং পোর্টের আমরা ডিপ রিফর্ম করতে চাইছি। চিটাগাং পোর্টকে আমরা চাইছি যাতে ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানিগুলো যাতে চিটাগাং পোর্টকে ম্যানেজ করতে পারে। আমরা চিটাগং টার্মিনাল কাউকে দিচ্ছি না। চিটাগাং টার্মিনাল যাতে তারা ইনভেস্ট করেন, ম্যানেজ করেন। এখন পর্যন্ত আমরা তাদের কাছ রেসপন্স পেয়েছি যে, তারা তিন বিলিয়ন ডলারের মতো ইনভেস্ট করবে। এবং এই চিটাগাং পোর্টে যদি এফিশিয়েন্সি লেভেল দ্রুত যদি এগিয়ে নিতে পারি, সেটার একটা মাল্টিপ্লায়ার এফেক্ট হবে পুরো বাংলাদেশের ইকোনমিতে।

তিনি আরো বলেন, পুরো ওয়ার্ল্ডের এখন ট্রেডের যে একটা প্রটেকশনিজম চলছে গ্লোবাল ট্রেডে, সেই জায়গায় আমরা একটা বেনিফিটের জায়গায় আছি। আমরা খুব দ্রুত এটা থেকে বেনিফিট পেতে পারি। কী রকম? যেমন ধরেন, আপনারা বড় বড় দেশ একে অপরের বিপরীতে ট্যারিফ ইম্পোজ করছে। এই ট্যারিফ ইম্পোজ করার কারণে যেই ফ্যাক্টরিগুলো হচ্ছে লো কস্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি, তারা আসলে খুঁজছে যে, তারা কোন দেশে গেলে তাদের এই ধরনের ট্যারিফ ফেস করতে হবে না। কোন দেশে গেলে লেবারটা লো কস্টে করতে পারবে।

তো বাংলাদেশের চেয়ে বেটার ডেস্টিনেশন পুরো বিশ্বে এখন নেই। সেই আলোকেই আমাদের চিফ অ্যাডভাইজার চাইছিলেন বাংলাদেশকে একটা ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করা।

তিনি যোগ করেন, ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করার মূল শর্ত হচ্ছে পোর্টকে এফিশিয়েন্ট করতে হবে। পোটের এফিশিয়েন্সি অন্যমাত্রায় নিতে হবে। তো এই অন্য মাত্রায় নেওয়ার টেকনোলজি আমাদের নেই। ওই ম্যানেজমেন্ট স্কিলটাও আমাদের তৈরি হয়নি। এটার জন্য আমরা বিদেশের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছি। দুবাই পোর্ট ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কথা বলছি। এপি মূলার মার্কসের সঙ্গে কথা বলছি এবং সিঙ্গাপুরের পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটির সঙ্গে কথা বলছি। এর ফলে যেটা হবে, আমরা ওরা যদি ম্যানেজ করেন, তাহলে আমাদের পোর্ট এফিশিয়েন্সি বাড়বে। আর পোর্ট এফিশিয়েন্সির দিকে তাকিয়ে থাকে ওয়ার্ল্ডের বড় বড় কোম্পানিগুলো যারা ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ইনভেস্ট করে, তারা তখন চিন্তা করবে যে, ওকে দিস ইজ হাই টাইম টু ইনভেস্ট ইন বাংলাদেশ।

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, এফডিআই আমরা যদি ঠিক করতে পারি, প্রচুর আনতে পারি, আর সামষ্টিক অর্থনীতি ঠিক থাকে, তাহলে আমরা মনে করছি যে এটার প্রভাব ক্যাপিটাল মার্কেটে পড়বে। ক্যাপিটাল মার্কেট গ্রো করতে বাধ্য।

তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে ইনফ্লেশন কমানো। এটা আমাদের একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা ইন্টারেস্ট রেটকে হাই করে করতে করতে এখন বোধ হয় ১০ শতাংশের বেশি, ওটা করার পরে আমরা দেখছি যে, ইনফ্লেশন কমা শুরু হয়েছে। আমাদের আশা, যেটা আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, এই বছরের শেষে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে আনবে।

তিনি বলেন, এফডিআই আসা শুরু হয়েছে। জুনে আপনি দেখবেন যে, চায়না থেকে আসছেন একজন কমার্স মিনিস্টারের নেতৃত্ব ১৫০ জনের মতো চাইনিজ ইনভেস্টর। চাইনিজরা যদি বাংলাদেশে আসেন, আমরা যেই জব গ্রোথটা চাচ্ছি, এটা খুব দ্রুত হবে।

এনবিআর দুই ভাগ করাটা সরকারের অগ্রাধিকার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্স কালেকশনটা সবসময় কম ছিল। এটার কারণ আমরা প্রচুর ট্যাক্স এক্সেমশন দিয়েছি এবং ট্যাক্স কালেকশনের যে সিস্টেমটা, খুব ইনিফিশিয়েন্ট ছিল। সরকার এই জায়গাটায় খুব ফোকাস দিয়েছেন। সেই আলোকেই কিন্তু এনবিআরকে দুভাগ করা হয়েছে। এটার ফলে যেটা হয়েছে যে আমরা মনে করি যে ট্যাক্স কালেকশন বাড়বে।

এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশে সামরিক অবকাঠামো গড়তে চায় চীন — দাবি যুক্তরাষ্ট্রের May 25, 2025
‘কোমর শক্ত করুন’, কাকে বললেন জামায়াত আমির? May 25, 2025
‘প্রতিটা গ্রাম শাহবাগ করে ফেলবে বিএনপির সৈনিকরা’ May 25, 2025
img
দুই বছর পর নতুন ধারায় বাজেট প্রণয়ন করা সম্ভব : পরিকল্পনা উপদেষ্টা May 25, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বৈঠক সম্পন্ন May 25, 2025
img
নির্বাচন আমার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয় : জামায়াত আমির May 25, 2025
‘পাকিস্তান পৌঁছেছে বাংলাদেশ দলের প্রথম বহর’ May 25, 2025
ড. ইউনুস যা করতে পারবে অন্য কেউ তা পারবে না’ May 25, 2025
img
পরিবর্তনের মিছিল নিয়ে ছুটছেন হাসনাত May 25, 2025
img
শপথ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করিনি, এন্ট্রি করিয়েছি : ইশরাক হোসেন May 25, 2025
img
আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য খুবই গর্বিত : প্রীতি জিনতা May 25, 2025
নিরপেক্ষঅন্তর্বর্তীসরকার চান: রিজভী May 25, 2025
img
শিল্পোদ্যোক্তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে : বিটিএমএ সভাপতি May 25, 2025
img
ঈদকে সামনে রেখে গতি বেড়েছে রেমিট্যান্সে,২৪ দিনে এলো ২২৫ কোটি ডলার May 25, 2025
img
মধ্যনগরে মাদরাসা সুপারের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ May 25, 2025
img
ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস May 25, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক : যমুনায় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা May 25, 2025
‘অবৈধ কালো আইন মানব না’ স্লোগানে উত্তাল সচিবালয় May 25, 2025
দুদকের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা, তদন্তে সিআইডি May 25, 2025
img
যন্ত্রণায় কাতর মিমি, দীর্ঘদিন ধরে যে রোগের সঙ্গী May 25, 2025