১৭ বছর বয়সেই নিজেকে বড় তারকায় পরিণত করে তুলেছেন বার্সেলোনার স্প্যানিশ উইঙ্গার লামিনে ইয়ামাল। মাঠের পারফরম্যান্সে তিনি সকলের চোখ জুড়িয়ে চলেছেন। এবার হৃদয় জিতলেন মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। ইয়ামাল মনস্থির করেছেন দাদি ফাতিমাকে নিয়েই বার্সেলোনার সঙ্গে নতুন চুক্তির পর আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন করবেন। তার অপেক্ষায় সেই সময়টি পিছিয়ে দিলেন এই তারকা।
বার্সার হয়ে ২০২৪–২৫ মৌসুম দুর্দান্ত কেটেছে ইয়ামালের। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে করেছেন ১৮ গোল, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ২৫টি। মাঠে ম্যাচের চরিত্রটা বদলে দিয়েছেন আরেক উইঙ্গার রাফিনিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। এমন এক অবস্থায় বার্সাও চায়নি ইয়ামালকে সহসা ছেড়ে দিতে।
ফুটবলার এবং ক্লাব দুই পক্ষই সমঝোতার ভিত্তিতে গতকাল (মঙ্গলবার) নতুন চুক্তি সম্পাদন করেছে। ২০৩১ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন ও ইয়ামালের রিলিজ ক্লজ রাখা হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলার। ইয়ামালকে কোনো ক্লাব নিতে চাইলে ওই পরিমাণ অর্থই বার্সাকে দিতে হবে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।
চুক্তি সম্পন্নের পর স্বভাবতই একইদিন আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন হয় সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের। কিন্তু দাদি আসতে পারবেন না বলে লামিনে ইয়ামাল ফটোশ্যুটের সময় সময় জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন। ১৯৯০ সালে নিজ ভূখণ্ড মরক্কো ছেড়ে বার্সেলোনায় চলে আসেন ফাতিমা। ওই সময় তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে ছিলেন ইয়ামালের বাবা মুনির নাসরাউই–ও। দাদি ফাতিমাই মূলত বড় করেছেন ইয়ামালকে। কারণ বাবা মুনিরের সঙ্গে মা শেইলা ইবানার বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের তথ্যমতে– দাদির সঙ্গে ইয়ামালের সম্পর্কটা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়েও কিছুটা গভীরই বলা চলে। বার্সেলোনার উত্তরাঞ্চলের উপকূলবর্তী শ্রমজীবী শহর মাতারোর রোকাফোন্ডায় থাকেন ফাতিমা। ইয়ামাল তারকা বনে যাওয়ার পর বাড়ি কিনে দিতে চাইলেও দাদি অস্বীকৃতি জানান।
নিজের শৈশবের সেই ঠিকানার কথা ভুলে যাননি ইয়ামালও। গোল উদযাপনে এই কাতালান তারকা আঙুলের ইশারায় ৩০৪ সংখ্যাটি দেখিয়েছেন বেশ কয়েকবার, যা রোকাফোন্ডার পোস্টাল কোড।
ফুটবলে ইয়ামালের বেড়ে ওঠা বার্সেলোনার লা মাসিয়া অ্যাকাডেমিতে। যেখানে শিক্ষা ও ফুটবল প্রশিক্ষণ দুটোই নিয়েছেন একসঙ্গে। মাত্র ৬ বছর বয়সে সেই অ্যাকাডেমিতে যুক্ত হওয়ার পর বার্সেলোনার সিনিয়র দলে তার অভিষেক হয় ২০২৩ সালে। ইতোমধ্যেই ইয়ামালকে বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা বলে উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকরা। আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসির যোগ্য উত্তরসূরীতেও পরিণত হয়েছেন।
গত বছর উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে অভিষেক হয়েছিল ইয়ামালের। এরপর স্প্যানিশদের হয়ে ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে নিজের প্রথম গোলও করেন। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত সেই আসরে তাকে নিয়ে কিছুটা ঝামেলায়–ই পড়েছিল স্পেন।
কারণ জার্মানির স্থানীয় আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কমবয়সী কেউ রাত ৮টার পর কর্মক্ষেত্রে থাকতে পারবে না। এজন্য জরিমানার মতো হুমকিও উপেক্ষা করে স্পেন। এ ছাড়া গত বছরই সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে ব্যালন ডি’অরে নমিনেশন পেয়েছিলেন ইয়ামাল। জিতেছেন সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার কোপা ট্রফি।
আরএম/এসএন