কাশ্মির, উভয় দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া এবং পর্যটন নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে সংলাপে বসতে চান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। ভারতকে সংলাপে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
ত্রিপাক্ষিক এক সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে পূর্ব ইউরোপের দেশ আজেরবাইজানের রাজধানী বাকুতে আছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। বুধবার সেখানে প্রদান করা এক ভাষণে নয়াদিল্লিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আমি খুবই বিনয়ের সঙ্গে বলছি যে আমরা এই অঞ্চলে শান্তি চাই; আর এই শান্তির পথে যেসব ইস্যু বাধা সৃষ্টি করছে— বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে সেসব সমাধানের জন্য আমাদের আলোচনার টেবিলে আসা জরুরি।”
“এখানে আমি বিশেষভাবে কাশ্মির ইস্যুটিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কাশ্মির নিয়ে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদে যে রেজোল্যুশন পাস হয়েছে, সেটি বলছে যে জম্মু-কাশ্মির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের এক্তিয়ার রয়েছে শুধুমাত্র সেখানকার জনগণের। সংলাপে আমরা এই ব্যাপারটিকে সামনে আনতে চাই।”
“আর সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে আমি আন্তরিকভাবে বলতে চাই যে, ভারত যদি সত্যিই সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে চাই, পাকিস্তান অকপটভাবে সেক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কারণ পাকিস্তান হলো সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে ভয়াবহ শিকার। শুধু এই সন্ত্রাসবাদের কারণে আমরা গত কয়েক দশকে ৯০ হাজারেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছি, আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১৫ হাজার কোটি ডলার।”
গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ।
এ ঘটনায় সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত ৭ মে পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছেন ১১ সেনাসহ ৫১ জন এবং আহত হয়েছে ৭৮ জন।
‘অপারেশন সিঁদুর’ এর পাল্টা জবাব দিতে তার দু’দিন পর ৯ মে ‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’ শুরু করে পাকিস্তান। এতে ভারতে নিহত হন অন্তত ৩৬ জন এবং আহত হন কমপক্ষে ৪৬ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ১০ মে থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও এখনও ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্য।
বাকুতে প্রদান করা বক্তৃতায় ভারতের সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে শেহবাজ বলেন, “সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের ব্যাপারটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সিন্ধু নদের পানি পাকিস্তানের ২৪০ কোটি মানুষের লাইফলাইন। ভারত এই চুক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।”
“কিন্তু এটি সম্ভব নয়। অতীতেও সম্ভব ছিল না, ভবিষ্যতেও হবে না। আমরা ইতোমধ্যে এ ইস্যুতে তৎপরতা শুরু করেছি।”
সূত্র : ডন
আরএম/এসএন