আওয়ামী লীগের সময়ে পাচার হওয়া ২০ বিলিয়ন অর্থের সন্ধান মিলেছে

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া ২০ বিলিয়ন অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এটা প্রাথমিক হিসাব। এখনো অধিকতর তদন্ত চলছে। দিন দিন এ অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২৮ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, একজনই ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব অর্থ পাচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা উদঘাটন করা গেছে। অর্থ পাচার প্রতিরোধে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘পাচারের অর্থ ফেরত আনতে হবে, এ ধরনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য নতুন। আমরা কেউ এ ধরনের কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পাচারের অর্থ ফেরত আনার কাজ গতিশীল করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সে জন্য আইনে পরিবর্তন আনা হবে। ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্ত চলছে।

পাচারের অর্থ কবে নাগাদ ফেরত আসতে পারে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘পাচারের অর্থ ফেরত আনতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। ইতোমধ্যে বিদেশে একজনের সম্পদ জব্দ হয়েছে। সামনে আরও সম্পদ জব্দ হবে।

আমাদের উদ্দেশ্য, পাচারকারীদের ওপর চাপ তৈরি করা, যাতে আদালতের বাইরে গিয়ে অর্থ উদ্ধার করা যায়। কাউকে জেলে নিয়ে হয়রানি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কারও ব্যবসা বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা কারও ব্যবসা বন্ধ করিনি। যাদের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে, অন্য কারণে তা হয়েছে।

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আগে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ছেড়ে দেওয়া হবে উল্লেখ করে আহসান মনসুর বলেন, এতে আমানতকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই, কারণ তারা একটি শক্তিশালী ব্যাংকের অংশ হয়ে যাবেন।

তিনি আমানতকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যেন টাকা উত্তোলন না করেন, কারণ সরকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় তাদের আমানত নিরাপদই থাকবে। একীভূতকরণের আগে ব্যাংক রেজল্যুশন ফান্ড গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তহবিল সংগ্রহ করবে।

ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে আর্থিকভাবে দুর্বল ছয়টি ব্যাংককে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরে বিএফআইইউতে মোট ১৭ হাজার ৩৪৫টি সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রতিবেদন (এসটিআর/এসএআর) দাখিল হয়েছে; আগের বছরের তুলনায় যা প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া বিএফআইইউ গত অর্থবছরে ১১৪টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ মোট ১ হাজার ২২০টি তথ্য বিনিময়ও হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় যা ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।

বিএফআইইউর প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম বলেন, অর্থ পাচার ও হুন্ডি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও লেনদেন ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্রবণতা। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় স্থিতিশীলতা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে কাজ চলছে। ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্ত চলছে। এ কাজে পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

সভায় বিএফআইইউর পরিচালক মুহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, অর্থ পাচার ধরা ও উদ্ধার করা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে। গত বছরের জুলাই মাসের পর বিএফআইইউর কাজ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সন্দেহজনক প্রতিবেদন অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন পাঠানো চার গুণ বেড়েছে।

আরআর/এসএন     

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাজ কুন্দ্রার হুমকি: শিগগিরই ফাঁস হবে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি Jun 02, 2025
img
ফেসবুকে সারজিস আলমের পোস্ট: ফ্যাসিবাদ রুখতে সেনাবাহিনীর ‘স্পষ্ট অবস্থান’ দেখতে চান তিনি Jun 02, 2025
img
নিহত ছাত্রদল নেতা সাম্যর বড় ভাই যোগ দিলেন এনসিপিতে Jun 02, 2025
img
‘বহুরূপ’ ছবির নতুন পোস্টারে চমকে দিলেন ইধিকা পাল Jun 02, 2025
img
ঢাকা জেলায় এনসিপির প্রথম সমন্বয় কমিটি ঘোষণা Jun 02, 2025
img
সিরাজগঞ্জে গ্রেফতার আত্মগোপনে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি Jun 02, 2025
img
ট্রাম্পের দাবি: ২০২০ সালেই মারা গেছেন বাইডেন Jun 02, 2025
img
শেষ টি-টোয়েন্টিতেও হার, পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ Jun 02, 2025
img
আমাদের একাত্তরের সেই ক্ষত নিরাময় করা দরকার: পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট Jun 02, 2025
img
অনুমতি ছাড়া হজের চেষ্টা: মক্কায় ঢুকতে পারেননি ২ লাখ ৭০ হাজার মুসল্লি Jun 01, 2025
img
রংপুরে জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় জাতীয় পার্টি ও এনসিপির পাল্টাপাল্টি মামলা Jun 01, 2025
img
বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় পাশে থাকবে চীন Jun 01, 2025
সুব্রত বাইনের সাথে যোগসাজশ ছিল ‘র’ এর, সায়েরের চাঞ্চল্যকর দাবি! Jun 01, 2025
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নিয়ে যা বললেন অন্তরা Jun 01, 2025
ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলা আমার কাজ না: আমিনুল ইসলাম Jun 01, 2025
ভারতীয় গণমাধ্যমকে যে হুশিয়ারী দিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী Jun 01, 2025
img
পটুয়াখালীতে হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সংবাদ সম্মেলন পণ্ড Jun 01, 2025
img
বাড়ির খাবার খাওয়ার পরও যেসব ভুলে পেটে গ্যাস হয় Jun 01, 2025
"মেজর জিয়া আজীবন জীবন্ত!" Jun 01, 2025
img
আমি হেরে গেছি এবং শরীর যা চেয়েছে তাই করেছি :অমিতাভ Jun 01, 2025