আমের পর চীনের নজর এবার বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির নতুন অধ্যায় সূচিত হওয়ার পর এবার চীন বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষিভিত্তিক শিল্প—চামড়া খাতেও আগ্রহ দেখিয়েছে। বুধবার (২৭ মে) ঢাকায় এক যৌথ সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।

চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি, রপ্তানি সম্ভাবনা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো নিয়ে আয়োজিত এই বৈঠকটি দেশের অর্থনৈতিক কূটনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের আম বিশ্বমানের এবং স্বাদে অনন্য। এ বছর প্রথমবারের মতো চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আম রপ্তানি শুরু হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে কৃষি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে আরও মজবুত করবে।

তিনি বলেন, “আম রপ্তানির কারণে দুই দেশই লাভবান হবে। বাংলাদেশের কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হবেন, উৎপাদন বাড়বে, এবং কর্মসংস্থান তৈরি হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, এটি শুধু বাণিজ্যের নয়, দুই দেশের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ককেও দৃঢ় করবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বৈঠক শেষে বলেন, “চীন আমাদের কাছ থেকে চামড়া আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ প্রতিযোগিতামূলক। চীনের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশে চামড়া রপ্তানি করলে তা আমাদের শিল্প খাতের জন্য বড় সুযোগ হয়ে উঠবে।”

বাংলাদেশের চামড়া শিল্প দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানিমুখী হলেও নানা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের কারণে সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। তবে চীনের এই আগ্রহ সেই সম্ভাবনাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে।

বর্তমানে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ব্যাপক। বাংলাদেশ চীনের বাজার থেকে বিপুল পরিমাণে পণ্য আমদানি করলেও রপ্তানি তুলনামূলকভাবে খুবই সীমিত। এই প্রেক্ষাপটে চীন থেকে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুযোগ এবং নতুন পণ্যের অন্তর্ভুক্তি—যেমন আম ও চামড়া—বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু ব্যবসায়িক সম্পর্ক নয়, একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা। চীনের বাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত। আমরা চাই, বাংলাদেশের আরও পণ্য চীন বাজারে প্রবেশ করুক।”

চামড়া শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত। ঢাকার হেমায়েতপুরে স্থানান্তরিত ট্যানারি শিল্প, উন্নত প্রযুক্তি, এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এই খাতের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। চীনের সঙ্গে বড় পরিসরে বাণিজ্য হলে স্থানীয়ভাবে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “সরকার চামড়া শিল্পের উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিদেশি আগ্রহ বৃদ্ধির ফলে খাতটি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাই।”

এই বৈঠকটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে দুই দেশের সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ও নির্দেশ করে। রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেবল সরকারি পর্যায়ে নয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে তুলতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এই বাণিজ্য সহযোগিতা সেই সম্পর্কেরই প্রতিফলন।”

তিনি আরও বলেন, চীন বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধু। অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে চীন ভবিষ্যতেও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাবে।

যদিও এই অগ্রগতি ইতিবাচক, তবে বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। রপ্তানি মান বজায় রাখা, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পণ্য প্রস্তুত করা, এবং সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার যদি রপ্তানিকারকদের প্রণোদনা ও সহায়তা প্রদান করে এবং আমদানি-রপ্তানি নীতিমালাকে আরও সহজ ও উদার করে, তবে এই সুযোগ বাস্তব সফলতায় রূপ নিতে পারে।

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নতুন বাণিজ্য সহযোগিতার এ ধারা ভবিষ্যতে আরও প্রসারিত হবে এমন আশা প্রকাশ করেছেন উভয় পক্ষ। আম ও চামড়ার মতো খাতগুলোতে চীনের আগ্রহ প্রমাণ করে, বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে শুরু করেছে।

এই ধরণের উদ্যোগ শুধু বাণিজ্যিক সুবিধা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং আন্তর্জাতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতেও সহায়ক হবে।

এফপি/এস এন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গৃহীত আরপিও পুনঃসংশোধন একটি দলের কাছে নতিস্বীকারের শামিল : জামায়াত Nov 01, 2025
img
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, তা বাস্তবায়ন হতে হবে: মির্জা ফখরুল Nov 01, 2025
img
খুলনায় চালু হলো নতুন আধুনিক কারাগার Nov 01, 2025
img
রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয় : রিজভী Nov 01, 2025
img
জেলেদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি : মৎস্য উপদেষ্টা Nov 01, 2025
img
বিপিএলে খেলার আগ্রহ রোমারিও শেফার্ডের Nov 01, 2025
img
ক্লান্ত টাইগাররা চাঙ্গা হয়ে ফিরবে, দৃঢ় বিশ্বাস লিটনের Nov 01, 2025
img
৪২ বছর পর নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ ইংল্যান্ড Nov 01, 2025
img
সালমানের মৃত্যুর দিন শাবনূরকে বাসায় আটকে রাখেন ডলি জহুর Nov 01, 2025
img
নিউ ইয়র্কে জরুরি অবস্থা জারি Nov 01, 2025
img
হ্যালোইনের সাজে নতুন চমক দিলেন অপু বিশ্বাস Nov 01, 2025
img
জ্বালানি খাতের লুটপাট এখনও বন্ধ হয়নি : মান্না Nov 01, 2025
img
অভিনেতা রবি কিষাণকে মেরে ফেলার হুমকি Nov 01, 2025
img
ব্যাটিং-ফিল্ডিং ব্যর্থতায় হতাশ বাংলাদেশ, বিরতিহীনতার অযুহাত দিলেন লিটন Nov 01, 2025
img
ষড়যন্ত্র পরিহার করে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে : আমীর খসরু Nov 01, 2025
img
জুলাই সনদের দরকার নেই, গণতন্ত্র বাস্তবায়নে একটি সংসদ প্রয়োজন: মেজর (অব.) হাফিজ Nov 01, 2025
img
‘টাকার জন্য মা আমাদের বাড়ি জুয়াড়িদের ভাড়া দিতেন’ : ফারাহ খান Nov 01, 2025
img
নির্বাচনের স্বার্থে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কিছু মেনে নিয়েছে বিএনপি : হাফিজ Nov 01, 2025
img
ফের তানজানিয়ার ক্ষমতায় সামিয়া হাসান Nov 01, 2025
img
২ মাস পর পুঁজিবাজারে সাপ্তাহিক লেনদেনে বাড়লো গতি Nov 01, 2025