নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর বলেছেন, ‘সাম্প্রতিককালে আমরা কিছু আচার-আচরণ দেখে অবাক হচ্ছি। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা কলম ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিসের জন্য? যদি ফ্যাসিবাদী শক্তির পক্ষে কেউ লেখেন তার কলম ভেঙে দেবেন। এই কথাটাও ফ্যাসিবাদী শোনায়।
সম্প্রতি একটি টক শোতে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন নূরুল কবীর।তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বলতে কেবল আওয়ামী লীগকেই বোঝায় না। ফ্যাসিবাদ একটি রাজনৈতিক ভাবাদর্শ। বাংলাদেশের বহু সংগঠন, বহু প্রতিষ্ঠান এবং বহু রাজনৈতিক দলের মধ্যেও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা আছে।
তিনি আরো বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে মেলালে ফ্যাসিবাদের ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে ওঠে। সেই ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যেই আমরা বসবাস করছি। এ রকম পরিস্থিতিতে কোনটার পক্ষে বললে কার কলম ভেঙে দেবেন? এ রকম উক্তির কারণে কেউ যদি অভিযোগ করেন যে, আমরা আবারও আরেকটা ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে পড়ছি সেটাকে তো অসত্য বলা যাবে না। আমরা বলতে পারি এই তরুণদের জন্য গণতন্ত্রকামী মানুষের এক ধরনের মমত্ব আছে।তারা সেই মমত্বটাকে যেন নষ্ট না করেন।’
নূরুল কবীর বলেন, ‘৫ আগস্টের পর প্রচুর বিদেশি সাংবাদিক আমার কাছে এসেছেন। আমাকে তারা জিজ্ঞাসা করেছেন ৫ আগস্টের আগে ও পরে কেমন ফিল করছেন। আমি তাদের কয়েকজন সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েছি। কেন? জনস্বার্থপরায়ণ সাংবাদিকতার ওপরে সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন ধরনের চাপ থাকে।
এই চাপটা আনুষঙ্গিক। প্রশ্ন হলো, সেই চাপের কাছে যদি আপনি নতি শিকার করেন এবং সেই চাপটা চলে গেলে যদি আপনি আবার স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন—এ রকম অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার জন্য অবস্থাটা একই রকম। কারণ যত দিন হলো আমি সম্পাদক হয়েছি প্রত্যেকটা সরকারের পক্ষ থেকে আমার ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চাপ এসেছে। আমার সহকর্মীদের সততা ও সাহসিকতার কারণে এবং আমার প্রতিশ্রুতির কারণে আমি সেই চাপ মানিনি।’
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জানুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, আগে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। তাদের পক্ষে যেসব মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী আওয়ামী লীগের দালাল হিসেবে ফ্যাসিবাদের পক্ষে যোগ হয়েছেন। ফ্যাসিবাদের পক্ষে যে কলম লিখবে, আমরা সে কলমগুলো ভেঙে দেব।’
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পক্ষে যে মিডিয়া কথা বলবে, সে মিডিয়ার বিপক্ষে আমাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত অবস্থান থাকবে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের কথা যদি বুঝতে ব্যর্থ হন, আ. লীগের যে পরিণতি হয়েছে, পরবর্তীতে যাঁরাই নীতিনির্ধারণের ফোরামে আসবেন, তাঁদের পরিণতি আওয়ামী লীগের মতো হবে।’
এমআর