পটুয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় টানা বর্ষণে রেকর্ড পরিমাণ ১১৬.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে এটি জেলার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। সক্রিয় মৌসুমি নিম্নচাপের কারণে এ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, গভীর নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারে জেলার গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার অন্তত ২০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে একাধিক পয়েন্টে বেড়িবাঁধ। এতে পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ ও হাটবাজার। হাজার হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে রয়েছে।
গলাচিপা পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকা সম্পূর্ণ পানির নিচে। পানপট্টি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে পানপট্টি বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া ৫৫/৩ নম্বর পোল্ডারের প্রায় ১০-১৫ ফুট অংশ ধসে পড়ে বিবির হাওলা, গুপ্তের হাওলা, সতিরাম ও খরিদা গ্রামের বহু ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রাম, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ারচর এবং ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামসহ বহু এলাকা পানির নিচে। এসব অঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কৃষিজমিতে পানি ঢুকে পড়ায় ধান, ডাল, বাদামসহ নানা কৃষিপণ্যের ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে গলাচিপা ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, হরিদেবপুর খেয়াঘাট, পায়রাকুঞ্জ ফেরিঘাট ও খেয়াঘাটসহ জেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘাট ও সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে জেলা শহরের সঙ্গে গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী সহ একাধিক উপজেলার যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গলাচিপা ফেরিঘাটে আটকে পড়া ট্রাকচালক নাজমুল ইসলাম খান রুদ্র বলেন, ‘পান নিয়ে গলাচিপা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম কিন্তু ফেরিঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় আটকে পড়েছি।’
রাঙ্গাবালী উপজেলার বাসিন্দা তুহিন রাজ বলেন, ‘আমাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। কিন্তু নদী এখন উত্তাল। অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। আমরা আশা করি প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে টেকসইভাবে এসব বাঁধ নির্মাণ করবে।’
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, ‘সক্রিয় মৌসুমি নিম্নচাপের কারণে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। পটুয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৬.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ বছরে সর্বোচ্চ।’
অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে এবং জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এমআর