আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান সেলিম। কারণ, তিনি বেঁচে থাকা সত্ত্বেও তাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে করা হয়েছে একটি হত্যা মামলা। মামলার এজাহারে তাকে জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দেখানো হয়েছে। দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে বিগত সরকারের রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীর নাম। আর মামলাটি করেছেন তারই বড় ভাই।
এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন সেলিম। তার অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মামলাটিকে সত্যি বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলার বাদী ও দুই সাক্ষী সবাই সেলিমের আপন ভাই। ইতোমধ্যে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে ডিএনএ পরীক্ষারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তদন্তের অধীনে রয়েছে মামলাটি।
সেলিমের মতে, পারিবারিক জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে তার ভাইরা এই ‘মৃত্যু নাটক’ সাজিয়ে মামলা করেছে। তিনি বলেন, ‘জীবিত থাকতে কেউ যদি আমাকে মৃত বানায়, এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে?’ সেলিম জানান, এখন পর্যন্ত পাঁচবার ঢাকায় গিয়ে আদালত, থানা ও ডিবি কার্যালয়ে হাজির হয়ে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করেছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে তীব্র উদ্বেগ জানান মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা। মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘এটা শুধু একজন নিরীহ মানুষের জীবনের ওপর হুমকি নয়, বরং শহীদদের স্মৃতিকে অপমান করা’। পাশাপাশি আইনজীবী এলিনা খান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা বিচারপ্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দিচ্ছে’। প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করতে প্রতিটি মামলা যাচাই করে মিথ্যা মামলাগুলো বাতিল করতে হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের পর দেশে দেড় হাজারের বেশি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে হত্যা মামলা রয়েছে প্রায় ৬০০টি। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, এই মামলা তদন্তে স্বাধীন টাস্কফোর্স গঠন করা জরুরি। তাদের মতে, এসব মামলা ব্যক্তি আক্রোশ বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এসএন