ফরিদপুরের সবচেয়ে বড় পশুর হাট ‘টেপাখোলা হাট’ বেশ জমে উঠেছে। ঈদ সামনে রেখে বড় এ হাটটি এখন জমজমাট। হাটে ব্যাপকহারে গরু এলেও ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি। বড় গরুর চাহিদা নেই, ক্রেতা কম, দাম কম। সবমিলিয়ে এবার গরুর হাটে পশু বেচাকেনা নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে ব্যবসায়ী ও খামারিদের মাঝে।
তবে অনেকের আশা, ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসবে ততোই বাড়বে কেনা-বেচা। এছাড়া কম দাম হওয়ায় খুশি ক্রেতারাও।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ৪০টি গরুর হাট রয়েছে। এ বছর ফরিদপুরে কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৮ হাজারের বেশি। জেলার ৯টি উপজেলার ৮ হাজার ১৭৮টি ছোট-বড় খামার ও কৃষকের গোয়ালে এর থেকেও আরও ৩ হাজার বেশি পশু বিক্রির জন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৫১ হাজার ১৬৭টি গরু, ৫৪ হাজার ৯২৫টি ছাগল, ৪ হাজার ৫৯৭টি ভেড়া ও ১০৫টি মহিষ।
জেলার বড় হাট হিসেবে পরিচিত টেপাখোলা হাটে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে কমপক্ষে ২০ হাজারের অধিক গরু হাটটিতে এসেছে। বড়, ছোট-মাঝারি থেকে সব ধরনের গরু রয়েছে। আকারভেদে ২৫ হাজার থেকে শুরু করে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। হাটের নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি রয়েছে ইজারাদার কর্তৃক স্বেচ্ছাসেবী ও জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেনারি চিকিৎসক।
তবে গরুর তুলনায় ক্রেতা কম। কেনার থেকে দেখার, দাম শোনার মানুষের সংখ্যাই বেশি। আবার বড় গরুর চাহিদা নেই বললেই চলে। কম দামে ক্রেতারা খুশি হলেও আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ বিক্রেতারা।
নুর ইসলাম শেখ নামে এক ক্রেতা বলেন, আজকের হাটে গরুর আমদানি বেশি। তুলনামূলক গতবারের চেয়ে দাম কম রয়েছে। আমি দুটি গরু কিনেছি। এই গরু অন্য জায়গায় বিক্রি করলে লাভ হবে। ছোট গরুর চাহিদা বেশি।
আরেক ক্রেতা আদেল শেখ বলেন, এখনও কয়েকদিন বাকি আছে। এ হাটে কিনতে আসিনি। দেখতে এসেছি। হাট ঘুরে দেখলাম। দরদাম করলাম। কয়েক হাট ঘুরে তারপর কিনবো। তবে এবার গরুর চাহিদা কম হলেও আমদানি বেশি। বড় গরু একটা না কিনে প্রয়োজনে দুই তিনটা কিনবো। গতবারের চেয়ে দামও কম।
হাটের ইজারাদার এম এ সালাম লাল মিয়া বলেন, প্রতি মঙ্গলবার বসে এই হাট। দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে বড় গরুর হাট টেপাখোলা। এরইমধ্যে গরুর হাটটি বেশ জমে উঠেছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা হাসিল লাখে ৩ হাজার টাকা নিয়ে থাকি।
হাটে আসা গরু ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, ছোট-বড় মিলিয়ে ৮টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। এ হাটে অনেক গরু আসছে, কিন্তু কেনার মানুষ নেই। দেখার মানুষের সংখ্যা বেশি। ৮টি গরুর মধ্যে ৩ লাখ ৮০ হাজর টাকায় ৩টি বিক্রি করতে পেরেছি। এতে সীমিত লাভ হয়েছে। অথচ গত বছর এই সাইজের গরুর দাম ছিল চার লাখের ওপরে।
মনির হোসেন নামের এক খামারি বলেন, আমার খামারে ছোট বড় মিলিয়ে ১২টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গরুর ওজন ১৫ মণের ওপরে। টেপাখোলার হাট বড় হাট, এজন্য বড় একটি গরু হাটে এনেছি। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দেখেন, দাম শোনেন। কিন্তু একটা লোকও দাম বলেন না। কেনার মতো লোকই পেলাম না। তাই বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতে হবে। এবার বড় গরুর চাহিদা নেই বললেই চলে। শেষ পর্যন্ত কী হবে দেখার বিষয়।
এ বিষয়ে ফরিদপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস জানান, টেপাখোলা হাট জেলার সবচেয়ে বড় হাট। হাটে আমাদের মেডিকেল টিম রয়েছে। কোনো গরু বা পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জেলায় ৪০টি হাট রয়েছে। এর মধ্যে হাটগুলোতে ১৮টি মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে। এখনও কোরবানির বেশ কয়েকদিন বাকি। এখন পর্যন্ত কেনাবেচার কথা ভালো-মন্দ বলা সম্ভব নয়।
এফপি/এসএন