ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য কমিশনার হিসেবে তিনজন শিক্ষকের নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ঈদের ছুটির পর সিন্ডিকেটের অনুমোদন পাওয়ার পরই পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২১ মে থেকে একদল শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণার দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন। প্রায় ৮০ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে—যাতে বলা হয়, ঈদুল আজহার আগেই সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি নিয়ে কমিশন গঠন করা হবে—তারা অনশন প্রত্যাহার করেন। তবে এখন জানা যাচ্ছে, ঈদের আগে কমিশন গঠনের ঘোষণা আসছে না।
সোমবার (২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে কিছু সময় নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠক আয়োজনে সাময়িক স্থবিরতা সৃষ্টি হলেও ঘোষিত টাইমলাইন অনুসারে ৭ম ধাপের কাজ তথা ডাকসু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে।
ইতোমধ্যে সাতজন শিক্ষকের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনজনের নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম শামীম রেজা এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আরও জানানো হয়, ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের একটি টাইমলাইন প্রকাশ করে। এই টাইমলাইন অনুসারেই নির্বাচন আয়োজনের কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। ঘোষিত টাইমলাইন অনুসারে ৪র্থ ধাপের কাজ পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ৫ম, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম ধাপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
৪র্থ ধাপ পর্যন্ত কার্যক্রমের ফলাফল নিয়ে ৫ম ধাপে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্বের বৈঠক গত ১৩ মে সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের ছুটির পর ক্যাম্পাস খোলা হলে সেটি সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া ৬ষ্ঠ ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি ও সম্ভাব্য শিক্ষকদের কেউ কেউ ছুটিতে থাকায় নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগছে। শিগগিরই প্রস্তাবিত নামগুলো তাদের আনুষ্ঠানিক সম্মতির ভিত্তিতে ঈদের ছুটি শেষে অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সিন্ডিকেটে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন হবে। কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলো শুরু হবে এবং সময়মতো সবাইকে সেটি জানিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এই আলোচনা পর্বে ছয়টি সভা শেষে একটি সংশোধিত গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা হয়, যা ইতোমধ্যে ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে এবং এখন তা সর্বশেষ সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ‘ডাকসু ইলেকশন কোড অব কনডাক্ট রিভিউ কমিটি’ গঠন করা হয়, যারা এ পর্যন্ত সাতটি সভা সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন আচরণবিধির খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং সেটিও সর্বশেষ সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি ছাত্রসংগঠন, হল প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ৯টি মতবিনিময় সভা করেছে। কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে।
আরএ/টিএ