উপদেষ্টারা যৌক্তিক সময়ের অর্থটা বুঝতে পারছেন না: কায়সার কামাল

‘বিএনপি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছিল, কিন্তু এখন যারা উপদেষ্টা আছেন তারা হয়তো যৌক্তিক সময়ের অর্থটা বুঝতে পারছেন না, বলেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আমরা চাই না দেশের জনগণ রাস্তায় নেমে তাদের বুঝিয়ে দিক যৌক্তিক সময় কোনটা।’

আজ সোমবার (২ জুন) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের উদ্যোগে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

কায়সার কামাল বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন।

এই দাবি হঠাৎ করে বলা হয়নি, যেদিন প্রফেসর ইউনূস সাহেব শপথ নিয়েছিলেন সেদিনই তারেক রহমান বলেছিলেন রাজনৈতিকভাবে আমরা তাকে সমর্থন করি, কিন্তু যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছি।’

তিনি বলেন, ‘যৌক্তিক সময়ের অর্থটা এখন যারা উপদেষ্টা আছেন তারা হয়তো বুঝতে পারছেন না। আমরা চাই না দেশের জনগণ রাস্তায় নেমে তাদের বুঝিয়ে দিক যৌক্তিক সময় কোনটা। কারণ উপদেষ্টাদের মধ্যে এমন লোক আছেন তো ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ২৪৯ ভোট পেয়েছিলেন।

তারা নির্বাচনটা দিতে কেন ভয় পান বা দেরি করছেন দেশের মানুষ কিন্তু বুঝতে পারছেন। আর সেই জন্যই আমরা আমাদের যে দাবি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আইনজীবী সমাজের প্রতি অনুরোধ জানাবো ২০০৬ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে আমরা আইনজীবী সমাজ বিরামহীনভাবে আইনের শাসন কায়েম করার জন্য, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের বাক স্বাধীনতা, মানুষের ভোটাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আপাতত একটু বিরতি নিয়েছি।

যদি প্রয়োজন পড়ে এই আইনজীবী সমাজ রাস্তায় নামবো ভোটের দাবিতে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে, আইনের শাসন কায়েমের লক্ষ্যে।’

কায়সার কামাল বলেন, ‘দেশে যে মব জাস্টিস কালচার বাংলাদেশ তৈরি করা হয়েছে সেজন্য তো হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয়নি। যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেখতে পাচ্ছি সেজন্য তো আমার ভাই রক্ত দেননি। আমরা চাই এই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে বাংলাদেশে আইমের শাসন থাকবে, যেই বাংলাদেশে ন্যায় বিচার থাকবে, যেই বাংলাদেশে সাংবিধানিক অধিকারগুলো প্রত্যেকটা নাগরিক পাবে।

আর সেজন্যই তারেক রহমান ২০২৩ সালে ১১ জুলাই বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো ঘোষণা করা করেছেন। যে রাষ্ট্র কাঠামো আমার আপনার মুক্তির গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো কৃষকদের গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো স্বাস্থ্য অধিকার কর্মীদের গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো মানবাধিকার কর্মীদের গ্যারান্টি দিচ্ছে, দেসশের ১৮ কোটি মানুষের গ্যারান্টি দিচ্ছে, নিরাপত্তা দিচ্ছে। আইনজীবী সমাজের দায়িত্ব তারেক রহমানের এই ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করা।’

জিয়াউর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় আদর্শ ছিল সততা ও দেশপ্রেম। আজকে আমাদের সময় এসেছে নিজেদের জিজ্ঞেস করার আমরা উনার আদর্শের কথা বলে রাজনীতিতে নিজের চেয়ারটা পাকাপোক্ত করছি। সুতরাং মাপকাঠিতে আমরা কতটুকু যেতে পেরেছি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ডিসিপ্লিনে বিশ্বাস করতেন। আইনজীবী হিসেবে কোর্ট প্রাঙ্গণে আমরা যারা নেতৃত্বে আছি কতটুকু ডিসিপ্লিন ফলো করছি। গত ১৬ বছর যখন ফ্যাসিস্ট রেজিম ছিল সে সময় আওয়ামী আইনজীবীরা যেভাবে অত্যাচার চালাতেন আইনজীবীদের ওপর এবং আদালতে হুংকার দিতেন। আজকে যদি আইনজীবী ফোরামের নেতারা সেই কাজ করে তাহলে পার্থক্য কোথায়? জিয়াউর রহমানের ডিসিপ্লিন তো সে কথা বলে না। আওয়ামী লীগের এই কার্যক্রমের কারণে শুধুমাত্র আদালত না ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনার এই পতনের মাধ্যমে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। আমরা এমন কোনো কাজ করব না যাতে দুর্দিনে আমাদের পালিয়ে যেতে হয়। জিয়াউর রহমানের কর্মীরা কখনো পালাতে শিখে নাই। আমরা বিএনপি অনেক দুর্যোগ দুর্দিন দেখেছি, ওয়ান ইলেভেনের সময় একটা নেতাকর্মীও পালিয়ে যায়নি। তখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এই দেশের মাটিতে মরতে চাই। আর আরেক নেত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে চলে গেছে। খালেদা জিয়া কিন্তু দেশ ছেড়ে পালাননি। আমরা নেতাকর্মী, আইনজীবী ভাইবোনেরা যারা আছি জিয়ার আদর্শকে বুকে ধারণ করে আমাদের মধ্যে সততা ও দেশপ্রেম জিনিসটা অনুভব করতে হবে।’

ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব নিহার হোসেন ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আলহাজ বোরহান উদ্দিন ও ইকবাল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী খান হাসান, মকবুল হোসেন ফকির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মহি উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, জনগণের পক্ষের দল:সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু Jun 04, 2025
img
কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মসহ আটক কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্য Jun 04, 2025
জ্বা"লানি ও বায়োটেকে বিপ্লব আনতে পারে বিদ্যুৎ-ব্যাকটেরিয়া Jun 04, 2025
শ্রম ভবন অভিমুখে বসুন্ধরা গার্মেন্টস কর্মীরা Jun 04, 2025
img
সাপ্লিমেন্ট ব্র্যান্ডের প্রচারণা করে বিপাকে সামান্থা Jun 04, 2025
img
৪ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল ইস্যু নিয়ে মুখ খুললেন উপদেষ্টা Jun 04, 2025
img
ফিফার ছাড়পত্রে বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি পেলেন কিউবা মিচেল Jun 04, 2025
img
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড ঘোষণা Jun 04, 2025
img
বেশি দামে বিক্রির আশায় কোরবানির পশু নিয়ে রাজধানীমুখী খামারি ও ব্যাপারীরা Jun 04, 2025
ষাটে এসে গৌরীতেই শান্তি খুঁজলেন আমির? Jun 04, 2025
img
রোজাকে সারাজীবনের সঙ্গী হতে বললেন তাহসান Jun 04, 2025
img
পেনাল্টির নিয়মে আসলো বড় পরিবর্তন Jun 04, 2025
কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাফল্যের দিগন্তে বিজ্ঞানীরা Jun 04, 2025
img
হজ ব্যবস্থাপনায় প্রথমবার নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ Jun 04, 2025
img
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দেখা যেতে পারে হামজা চৌধুরিকে! Jun 04, 2025
সরকারের সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না বিএনপি! Jun 04, 2025
img
ভুয়া সনদে চাকরি, স্ত্রীসহ সাবেক এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা Jun 04, 2025
img
পিরোজপুরে জমজমাট পশুর হাট, তবুও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা Jun 04, 2025
img
পঞ্চগড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল ৩ জনের Jun 04, 2025
তাহাজ্জুদ পড়লে যে পাঁচটি পুরস্কার পাবেন | ইসলামিক জ্ঞান Jun 04, 2025