যখন শাহরুখ খান বলেছিলেন তিনি শেষ তারকা, তখন সেটা ছিল শুধুমাত্র আবেগের কথা নয়, বরং শিল্প এবং সময়কে নিয়ে এক সংশয়ের প্রকাশ। কিন্তু এখন রণবীর কাপুরের সাম্প্রতিক ক্যারিয়ার এমন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে—সেই ভবিষ্যৎ কি আগেই এসে গেছে?
রণবীরের তারকাখ্যাতি কখনোই গ্ল্যামার আর প্রচারনির্ভর ছিল না। তিনি নিজের অভিনয় দিয়ে ধীরে ধীরে যে অবস্থান তৈরি করেছেন, তা কোনো সুপরিকল্পিত লঞ্চের ফল নয়। রকেট সিং সিনেমায় এক সাধারণ সেলসম্যান, বারফিতে নীরবতার গল্প, রকস্টারে এক ভাঙা আত্মার সঙ্গীত, কিংবা তামাশায় নিজের অস্তিত্বের খোঁজ—এই সবকিছুর ভেতর দিয়েই তৈরি হয়েছে রণবীর নামক এক ব্র্যান্ড, যেখানে আগে শিল্পী, পরে তারকা।
এই শিল্পী যখন গণমান্যতার সঙ্গে মিলিত হন, তখন তা বক্স অফিসেও রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটায়। সঞ্জু ছবির বিশ্বব্যাপী আয় পাঁচশ আশি কোটির বেশি, ব্রহ্মাস্ত্রে চারশ কোটিরও বেশি আর অ্যানিম্যালে তার হিংস্র রূপ ভাইরাল হওয়ার পাশাপাশি বক্স অফিসে বাজিমাত করেছে।
রণবীর কখনোই নিজের পরিচয় পাল্টাননি। বরং সময়ের সঙ্গে সেই পরিচয়কে করেছেন আরও বিস্তৃত। অভিনয়ের দক্ষতা, ধারাবাহিকতা, সর্বভারতীয় গ্রহণযোগ্যতা এবং উচ্চ ঝুঁকি নেওয়ার সাহস—এই সব মিলে তিনি এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। হয়তো শাহরুখের মতো আবেগময় রাজত্ব বা সলমনের মতো উত্তরের ম্যাস অ্যাপিল তার নেই, কিন্তু তিনিই হয়তো একমাত্র অভিনেতা যিনি দুটি জগৎকেই সঠিক ভারসাম্যে ধারণ করতে পেরেছেন, নিজের মৌলিকতা ধরে রেখে।
এত কিছুর মধ্যেও থেমে নেই রণবীর। সামনে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনিনির্ভর বিশাল প্রজেক্ট রামায়ণ, যা নতুন ইতিহাস গড়তে পারে। রয়েছে অ্যানিম্যাল পার্ক, যেখানে তাকে দেখা যাবে আরও ভয়ংকর এক রূপে। আন্তর্জাতিক প্রশংসা আর ভারতীয় শিকড়ের এই মেলবন্ধন রণবীরকে করে তুলেছে এক ব্যতিক্রমী তারকা, যার খ্যাতি কেবল পর্দায় নয়, সময়ের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি কি শাহরুখ বা সলমনের চেয়ে বড়? হয়তো এখনো নয়। কিন্তু এখনকার প্রাসঙ্গিকতা, সাহস এবং শিল্পগত দৃঢ়তায় রণবীর কাপুর নিশ্চিতভাবেই আজকের বলিউডের এক শক্তিশালী মুখ। যেখানে অধিকাংশ তারকাই গর্জন দিয়ে আলোচনায় আসতে চান, সেখানে রণবীরের নীরব উপস্থিতিই অনেক বেশি আলোড়ন তোলে। তিনি শেষ তারকা নন, কিন্তু এই নতুন যুগের প্রথম নায়ক হয়ে উঠছেন নির্ভরযোগ্যভাবে।
এমআর/টিএ