ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৯৮তম ঈদুল আজহার জামাত। শনিবার সকাল ৯টায় শুরু হবে ঈদের প্রধান জামাত। এতে ইমামতি করবেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।
জামাতকে ঘিরে ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে সব প্রস্তুতি। ময়দানের লাইন টানা, রঙ করা, আজুখানা মেরামতসহ চলছে শেষ মুহূর্তের কার্যক্রম। প্রতিবছরের মতো এবারও লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায়ে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই ঈদগাহে প্রতি ঈদেই মুসল্লিদের ঢল নামে। অনেকে আবার বংশ পরম্পরায় এখানে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছেন। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
নিরাপত্তার বিষয়ে নেয়া হয়েছে চার স্তরের বলয়। মাঠে থাকবে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও ৫ প্লাটুন বিজিবি। ঈদগাহে প্রবেশের আগে মুসল্লিদের পার হতে হবে চারটি নিরাপত্তা চৌকি। প্রতিটি প্রবেশপথে থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে এবং দেহ তল্লাশি ব্যবস্থা।
মাঠের ভেতর ও চারপাশে বসানো হয়েছে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা, ৭টি ড্রোন এবং ৭টি লাইভ ক্যামেরা। এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রয়েছে র্যাবের স্নাইপার ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট। ঈদগাহের চারপাশে বসানো হয়েছে ৪টি ওয়াচ টাওয়ার।
জামাত নির্বিঘ্ন করতে দফায় দফায় বৈঠক করেছে ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও প্রশাসন। গত বুধবার মাঠের প্রস্তুতি দেখতে আসেন জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. কাজেম উদ্দিন, র্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মো. আশরাফুল কবির, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ।
দূরের মুসল্লিদের সুবিধায় ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদের দিন সকাল ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং পৌনে ৬টায় ভৈরব থেকে ট্রেন দুটি কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হবে এবং সকাল ৮টায় পৌঁছাবে। জামাত শেষে দুপুর ১২টায় ট্রেন দুটি ফিরে যাবে। জেলা প্রশাসক জানান, মুসল্লিরা নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই ঈদের নামাজ আদায় করে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, প্রায় আড়াইশ বছরের পুরানো এই ঈদগাহের আয়তন প্রায় ৬ একর। ১৮২৮ সালে এক লাখ ২৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন বলে জানা যায়। সেই ‘সোয়া লাখ’ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ঐতিহাসিকতা থেকেই মাঠটির নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’, যা পরবর্তীতে ‘শোলাকিয়া’ নামে পরিচিতি পায়।
তবে ঈদুল আজহার কোরবানির প্রস্তুতির কারণে প্রতি বছর এই জামাতে ঈদুল ফিতরের তুলনায় কিছুটা কম মুসল্লির সমাগম হয়।
এসএম/টিএ