ঈদের দ্বিতীয় দিন গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৭৫ জন নিহত

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের মতো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাতেও ঈদুল আজহা ছিল ৬ জুন। তার পরের দিন ৭ জুন ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর গোলাবর্ষণে উপত্যকাজুড়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৫ জন এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১০০ জন। রোববার গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগসূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

নিহতদের মধ্যে ১৬ জন একই পরিবারের সদস্য এবং এই ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন শিশুও রয়েছে। এই পরিবারটি বসবাস করত গাজার প্রধান ও মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটির সাবরা এলাকায়।

ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল আল জাজিরাকে বলেন, বিমান অভিযানের আগে কোনো সতর্ক সংকেত বা সাইরেন দেয়নি ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। তিনি আরও জানান, শনিবারের হামলায় অন্তত ৮৫ জন ধ্বংস্তূপের তলায় আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করা এখনও সম্ভব হয়নি।

“এটা ছিল পুরোপুরি ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা। শনিবার যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সবাই বেসামরিক এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন নারী ও শিশু আছেন।”

গাজা সিটির বাসিন্দা হামেদ কেহিল আল জাজিরাকে বলেন, “অন্যান্য বছর এ সময় আমরা সকাল সকাল উঠে নিজেদের এবং বাচ্চাদের নতুন পোশাকে সাজিয়ে বন্ধু-আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। আর এবার আমরা আমাদের শিশু ও স্বজনদের লাশ বহন করছি। গতকাল ভোররাতে আমাদের ঘুম ভেঙেছে হামলা, ধ্বংস আর আর্তনাদের শব্দে।”

গাজা সিটির অপর বাসিন্দা হাসান আলখোর আল জাজিরাকে বলেন, “গত প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যা যা করেছে, সেজন্য যেন নেতানিয়াহু (ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী)-কে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়।”

এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তাদের অভিযানের লক্ষ্য ছিল আসাদ আবু শারিয়া নামের এক হামাস নেতাকে নিধন করা। আসাদ আবু শারিয়া হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেডের অন্তর্ভুক্ত মুজাহিদিন ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল হামাস, তাতে অংশ নিয়েছিলেন।

এর আগে ঈদের দিন, অর্থাৎ ৬ জুনও দিনভর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং তাতে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ৪২ জন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।

হামাসের এ হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তারপর গত ১৭ মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৭৭ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৩০ জন। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালানোর পাশাপাশি গত মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণবাহী গাড়িও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং খাদ্য, সুপেয় পানি, ও ওষুধের অভাবে নরকের জীবনযাপন করছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা।

যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।

এদিকে সম্প্রতি গাজায় ফের দু’মাসের যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই প্রস্তাবনায় নেতানিয়াহু সম্মতি দিলেও হামাস এখন অনুমোদন করেনি।

এসএম/টিকে   

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কলম্বিয়ায় গুলিবিদ্ধ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিগেল উরিবে, নির্বাচনী প্রচারে হামলা Jun 08, 2025
img
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অগ্নিকাণ্ডে এক যুবক নিহত Jun 08, 2025
img
ফের চামড়া নিয়ে হতাশা, হাজার টাকাও ওঠেনি দাম Jun 08, 2025
img
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীতে চলছে পশু কোরবানি Jun 08, 2025
img
দেশের ২ বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস Jun 08, 2025
img
বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেস, ট্রাম্পের সেনা মোতায়েন, আটক ৪৪ Jun 08, 2025
img
বাজেট সংকটে ‘ব্রহ্মাস্ত্র ২’, আয়ান মুখার্জির নতুন গন্তব্য ‘ধুম ৪’ Jun 08, 2025
img
ঈদের ফিরতি যাত্রায় মাস্ক পরার অনুরোধ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের Jun 08, 2025
img
ফেরি থেকে পড়ে গেল অটোরিকশা, প্রাণ গেল ২ জনের Jun 08, 2025
img
শুধু পরিচালক নয়, ভবিষ্যতের চলচ্চিত্রের রূপকার হয়ে উঠেছেন রাজামৌলি ও সুকুমার Jun 08, 2025
img
‘পরম সুন্দরী’ পেছালে একাই রাজত্ব করবে অজয় দেবগণের ‘সন অব সর্দার ২’ Jun 08, 2025
img
সৌদির ওমরাহ-ওয়ার্ক ভিসা স্থগিত থাকবে ৩০ জুন পর্যন্ত Jun 08, 2025
img
জুলাইয়ে মুক্তি পাবে ‘ঘাটি’, প্রচারে আনুশকার অনুপস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ Jun 08, 2025
img
খাদে পড়ল মালবাহী ট্রাক, চালককে উদ্ধার করল ফায়ার সার্ভিস Jun 08, 2025
img
ইলন মাস্কের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ : ট্রাম্প Jun 08, 2025
img
ঈদের ছুটির পর ফের চালু মেট্রোরেল, কাঁচা বা রান্না মাংস বহনে নিষেধাজ্ঞা Jun 08, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় জীবনে বিভেদকে আরো তীব্র করে তুলেছেন : মাসুদ কামাল Jun 08, 2025
img
পূজা দিয়ে শুরু, ‘আনারকলি’ নিয়ে উৎসব মাতাতে আসছেন রবি তেজা Jun 08, 2025
img
‘শয়তান’ এর পর ‘মা’, কাজল ও মাধবনের হাত ধরে বলিউডে নতুন হরর ইউনিভার্সের যাত্রা Jun 08, 2025
img
সাধারণ প্রতিপক্ষের কাছে হেরে গেলেন নেইমার! Jun 08, 2025