জাতিগত সহিংসতায় বিপর্যস্ত উত্তর ভারতের রাজ্য মণিপুর। রাজ্যটিতে নতুন করে আরও ব্যাপক আকারে দাঙ্গা বাধার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিনিধি ছাড়াও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজ্যজুড়ে সহিংস বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৮ জুন) এ বৈঠক হয়। তখন সেখানে কারফিউ চলছিল। কিন্তু বিভিন্ন স্থান থেকে অস্থিরতার খবর আসতে থাকে। এর আগে শনিবার (৭ জুন) রাজ্যটিতে নতুন করে হিন্দু মেইতেই ও প্রধানত খ্রিস্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এবার চরমপন্থি একটি গোষ্ঠীর কয়েক সদস্যকে গ্রেফতারের ঘটনার পর বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে উগ্রবাদীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর চড়াও হয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে রাজ্যের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং পর্যালোচনা করা হয়।
উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা, পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজিপি), কমিশনার (স্বরাষ্ট্র), রাজ্যপালের সচিব, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক (আইনশৃঙ্খলা), আইজিএআর (এস), সিআরপিএফের মহাপরিদর্শক এবং অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রাজভবনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে- রাজ্যপাল বিজেপি, এনপিপি এবং কংগ্রেসের ২৫ বিধায়কের একটি প্রতিনিধিদলের সাথেও দেখা করেছেন। একদল বিধায়ক রাজভবনে মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লার সাথে দেখা করেন। বিধায়করা রাজ্যের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজ্যপালকে অবহিত করেন এবং একটি সমাধান খুঁজে পেতে তার হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেন।
রাজ্যপাল প্রতিনিধিদলকে বলেছেন, সমাধান এবং স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ভারতের মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি চলছে। কাকচিং, থৌবাল, ইম্ফাল পূর্ব ও ইম্ফাল পশ্চিম- এই চারটি উপত্যকা জেলায় চার বা ততোধিক ব্যক্তির সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শনিবার রাতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। ইম্ফাল পশ্চিমে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এবং মণিপুর পুলিশের যৌথ দল কর্তৃক আরামবাই তেংগোল (এটি) সদস্য কানন মেইতেইকে গ্রেফতারের ফলে সৃষ্ট উত্তেজনার জেরে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, পাঁচটি জেলায় পাঁচ দিনের জন্য ইন্টারনেট পরিসেবা স্থগিত করা হয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এটির ‘সেনাপ্রধান’ বলে পরিচিত কানন মেইতেইকে শনিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে এনআইএ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পরপরই শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে পুলিশের কনভয় আটকানোর চেষ্টা করে এবং তাকে হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিতে চায়। ঘটনাটি ইম্ফাল পশ্চিমের কোয়াকিথেল এলাকার কাছে ঘটে। এ সময় জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালায়।
আরামবাই তেংগোল (এটি) একটি সশস্ত্র মেইতেই গোষ্ঠী, যারা ২০২৩ সালের ৩ মে রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা শুরু হওয়ার পর প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। তখন গোষ্ঠীটি কুকি সাধারণ জনগণের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। সেসব হামলা ও হত্যায় ভারতীয় প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।
আরআর/টিকে