প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের আগেই তাকে উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এবং এরইমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।
এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘আমি কোনো ভুল করিনি, আর গোপন করার মতো কিছুই নেই। আপনি যদি সত্যিই সত্য জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে পার্লামেন্টে এসে দেখা করুন, মুহাম্মদ ইউনূস- চলুন কথা বলি।’-এমন খোলামেলা আহ্বানে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছেন সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি সরাসরি নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রকাশ্য আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে প্রকাশিত এই বক্তব্যে শুধু পার্লামেন্ট বলা হয়েছে, কিন্তু উল্লেখ করা হয়নি এটি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নাকি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। এই বক্তব্যটি সামনে আসার পরপরই এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিতর্কের জন্ম দেয়। দেশের প্রধান উপদেষ্টাকে এভাবে দেখা করতে বলা এবং তার সাথে আলোচনা করতে বলা ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয় বলে মনে করেন অনেকে।
এদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সম্পর্কে এখনো কোনও মন্তব্য করেননি। তার প্রেস উইং জানিয়েছে, তিনি সবসময় শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক আলোচনার পক্ষে, তবে পার্লামেন্টে গিয়ে সরাসরি বিতর্কে অংশ নেয়া তার পক্ষে কতটা যুক্তিসঙ্গত হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই আহ্বান বাস্তবে রূপ নেয়, তবে তা হতে পারে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত-যেখানে জাতীয় সংসদ পরিণত হতে পারে সত্য অনুসন্ধানের উন্মুক্ত মঞ্চে।
বিষয়টি নিয়ে এখন দেশজুড়ে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ। সত্যিই কি এই আলোচনায় ড. ইউনূস অংশ নেবেন? আর সেই আলোচনায় কী উঠে আসবে? উত্তর পেতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক। প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্য সফরের সময় আগামী সপ্তাহে এই বৈঠক করার অনুরোধ জানিয়েছেন টিউলিপ।
এ বিষয়ে রোববার (৮ জুন) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, চিঠি পাঠিয়ে এই অনুরোধ করেছেন টিউলিপ।
চিঠিতে ব্রিটিশ এমপি বলেছেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিযোগের বিষয়ে এই বৈঠকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করতে চান তিনি।
চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক ড. ইউনূসকে লিখেছেন, লন্ডনে আপনার সফরকালে যদি আমাদের সাক্ষাতের সুযোগ হয়, তবে আমার মায়ের বোন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হবে—তা পরিষ্কার করা সম্ভব হবে।
চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক ড. ইউনূসকে লিখেছেন, লন্ডনে আপনার সফরকালে যদি আমাদের সাক্ষাতের সুযোগ হয় তাহলে এই বৈঠক ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিটির সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে পারে। যেখানে আমার খালা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জড়িত কিছু প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আছে বলে ধারণা করছি।
তিনি আরও লিখেছেন, আমি লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী একজন ব্রিটিশ নাগরিক এবং গত এক দশক ধরে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের সংসদ সদস্য।
বাংলাদেশের প্রতি আমার আবেগ থাকলেও, আমি সেখানে জন্মগ্রহণ করিনি, থাকি না বা কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থও নেই।
টিউলিপ অভিযোগ করেন, তার আইনজীবীরা লন্ডন থেকে দুদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনও জবাব পাননি। উল্টো সংস্থাটি ঢাকার একটি ‘অচেনা ঠিকানায়’ কাগজপত্র পাঠিয়ে যাচ্ছে। তিনি চিঠিতে লিখেছেন, এই কল্পিত তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করা হচ্ছে অথচ আমার আইনি দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হচ্ছে না।
তিনি আরও লিখেছেন, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন, এসব অভিযোগ কীভাবে আমার পার্লামেন্টারি দায়িত্ব ও দেশের প্রতি অঙ্গীকারকে ব্যাহত করছে।
উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সুবিধা ভোগ করেছেন।
তার খালা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তার অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু হয়েছে। দুদক দাবি করেছে, টিউলিপ বা তার মা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে’ অবৈধভাবে ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের একটি প্লট পেয়েছেন।
টিউলিপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার আইনি দল অভিযোগগুলোকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে।
তিনি দাবি করেছেন এসব বিষয়ে তার সঙ্গে বা তার আইনজীবীদের কেউ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেনি।
আরএম