সকল ধর্মের মানুষ নিয়ে মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই : জামায়াত আমির

ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদের দেয়াল থাকবে না মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা এ দেশেই জন্মগ্রহণ করেছি। জন্মসূত্রে আমরা দেশের মর্যাদাবান নাগরিক। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমান—এই চার ধর্মের অনুসারীদের মিলেই এ বাংলাদেশ। সকল ধর্মের মানুষ নিয়ে মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।


গতকাল সোমবার (৯ জুন) বিকেলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সকল ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।


তিনি বলেন, আপনারা অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ৫ আগস্টের পর আমাদের কী হবে, আমাদের আপনারা পাননি, ৫ আগস্টের পরে বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানরাও আমাকে পায়নি। এটা আমি আমার কথা বলছি না, আমাদের কথা বলতেছি। আমাদের স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে দেওয়া হয়নি।

আমি চোর, ডাকাত, দখলদার ও চাঁদাবাজ নই, আমি খুনি কিংবা সন্ত্রাসও নই। আমাকে কেন কয়েকবার জেলে রাখা হলো? এটা শুধু আমার ব্যাপারে না; এই ধরনের ঘটনা লাখ লাখ মানুষেরও রয়েছে। আমাদের সমাজের মানুষের সুখ, দুঃখ, ব্যথা, বেদনার অংশীদার হতে দেওয়া হয়নি। তারপরও যেখানে খবর পেয়েছি, সারা দেশে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।

শফিকুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে বরগুনায় পঞ্চম শ্রেণির একটি মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা হয়েছে। মেয়েটির বাবা থানায় মামলা করেছিলেন। লম্পটরা কেন মামলা করল শুধু এ কারণেই তার বাপকে খুন করা হলো।

আপনাদেরই সম্প্রদায়ের একজন অতি সাধারণ মানুষ। মোরগ বিক্রির দোকানে তিনি চাকরি করতেন, এই দিয়ে তার ছোট্ট সংসারটি চলতো।

তিনটা মেয়ের মধ্যে এই মেয়েটি বড়, এরপরের দুইটা এর চেয়েও ছোট। কোলের শিশুটির বয়স আড়াই মাস। আমি সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনাদের পাশে কে কে দাঁড়িয়েছেন। তারা বললেন—ডিসি সাহেব মানুষ পাঠিয়েছেন ১০ হাজার টাকা আমাদের দিয়ে গেছে। বলেছিলাম—আর কিছু কি তারা বলেছে, তিনি বললেন—মামলাটা চলবে, তারা দেখবেন এটা। জিজ্ঞেস করলাম—এখন আপনারা চলবেন কীভাবে?

তিনি বললেন—যিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র অভিভাবক তিনি মারা গেছেন, এই পরিবারের এখন আর কোনো পুরুষ নেই। তার স্ত্রী বিধবা আর তিনটা এতিম মেয়ে। মহিলাটি তখন কেঁদে কেঁদে প্রায় বেহুশ হওয়ার উপক্রম।

সে হাউ মাউ করে খেতে বলল—আমরা বাঁচবো কী করে, কী খাব? কে আমাদের খাবার দেবে, আমাদের সংসারের একমাত্র বাতি সে তো নিভেই গেল। আমি তখন আড়াই মাসের বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বলেছিলাম—এই বাচ্চার দায় দায়িত্ব আমি নিলাম। আমাদের সংগঠন আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রতি মাসে তার আর্থিক ভরণ-পোষণ দিয়ে যাচ্ছি।

বড়লেখা উপজেলা জামায়াতের আমির এমাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আব্দুল বাছিতের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন—জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, মৌলভীবাজার-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, ঢাকার পল্টন থানা আমির শাহিন আহমদ খান। এ ছাড়া উপজেলা নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ আল মাফুজ সুমন, উপজেলা কর্ম পরিষদ সদস্য আব্দুল মুহাইমিন ও মো. কামাল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন—বড়লেখা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রনজিত কুমার পাল, সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন চক্রবর্তী, সহ-সাধারণ সম্পাদক গীতেশ চন্দ্র দাস, কোষাধ্যক্ষ মুক্তাসান বিশ্বাস ও হ্যাডম্যান কেমেডি সুমের।

অনুষ্ঠান শেষে ডা শফিকুর রহমান সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এসএম/টিএ       

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাণিজ্য উত্তেজনায় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমবে : বিশ্বব্যাংক Jun 11, 2025
জাহিদ হাসান শুধু আমার ভুতের অবয়ব দেখে ভয় পেয়েছিল Jun 11, 2025
ফিরলেন আব্দুল হামিদ, বরখাস্ত পুলিশ আর গ্রেপ্তার নুসরাত ফারিয়া! Jun 11, 2025
ক্যামেরার সামনে আন্টি না বলে নাম ধরে বলতে বললেন জয়া আহসান Jun 11, 2025
img
শেরপুরে মাদক সেবনের দায়ে ৬ জনের ৩ মাসের কারাদণ্ড Jun 11, 2025
img
রাজধানীর নিকুঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা পিলার খায়ের আটক Jun 11, 2025
img
হাতিয়ায় বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৩৫ Jun 11, 2025
img
ভৈরবে ফুটবল ম্যাচ ঘিরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০ Jun 11, 2025
img
ঘরের মাঠে হারের পর বাছাইপর্বে টিকে থাকতে কোন সমীকরণে বাংলাদেশ? Jun 11, 2025
img
রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে অনির্দিষ্টকালের জন্য দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা Jun 11, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত Jun 11, 2025
img
দ. আফ্রিকায় ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভেসে গেল শিক্ষার্থীদের বহনকারী স্কুলবাস Jun 11, 2025
img
‘আজ বুঝলাম, আমি তোমার জন্য কিছুই না’, পোস্ট দিয়ে মডেলের আত্মহত্যা Jun 11, 2025
img
শার্শায় বিএনপিকর্মীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ Jun 11, 2025
img
হানিমুনে গিয়ে স্বামীকে হত্যা করা সেই নারীকে আজ আদালতে তোলা হবে Jun 11, 2025
img
শিলংয়ের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে কঙ্গনার প্রতিক্রিয়া: ‘আমি স্তম্ভিত’ Jun 11, 2025
img
ঈদের ছুটিতেই এনসিপির ক্রাউডফান্ডিংয়ে অনুদান প্রায় ১৪ লাখ টাকা Jun 11, 2025
img
দীপিকার ৮ ঘণ্টা কাজের প্রসঙ্গে মুখ খুললেন শুভশ্রী Jun 11, 2025
img
চলতি বছর সৌদি আরবে হজে গিয়ে এখন পর্যন্ত ২২ বাংলাদেশির মৃত্যু Jun 11, 2025
img
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৭০ জনেরও বেশি নিহত Jun 11, 2025