কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মধুপুর বাজারে চা পানরত শ্বশুর টুটুল হোসেনকে (৫৫) প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে জামাতা ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত ৯টার দিকে উপজেলার মধুপুর পশুহাট সংলগ্ন কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাজারের একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন টুটুল। এ সময় দুইটি মোটরসাইকেলে হেলমেট পরিহিত ৪ জন এসে টুটুলকে গুলি করে।
ওই সময় স্থানীয়রা তাদেরকে ধাওয়া দিলে দ্রুত একটি শটগান, কয়েক রাউন্ড গুলিসহ একটি মোটরসাইকেল ফেলে রেখে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে একটি শটগান, কয়েকটি গুলি ও হত্যায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা করেছে।
নিহত টুটুল হোসেন (৪০) কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা তুরাব হোসেনের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশে ফিরে স্থানীয় বাজারে মুদি ব্যবসা করতেন।
অন্যদিকে ঘাতক জামাতা ইমরান হোসেন কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার মামুনের ছেলে। তিনি ব্যবসা করতেন।
নিহতের ভাই সাব্বির হোসেন বলেন, রাত ৯টার দিকে মধুপুর গরুর হাট বাজারে দুজনের সঙ্গে চা খাচ্ছিল টুটুল। এসময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মেয়ের জামাই ইমরান টুটুলের মুখে গুলি করে।
এসময় তাকে একটি সিএনজিতে তুলে হাসপাতালের নেওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।
সাব্বির আরো বলেন, ইমরান ও তার সঙ্গে আরো তিনজন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। তারা দুইটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিল। ইমরান নিজের হাতে তার শ্বশুর টুটুলের মুখে গুলি করে হত্যা করেছে। স্থানীয়রা তাড়া দিলে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে দুজন পালিয়ে যায়।
এসময় মোটরসাইকেল ও অস্ত্র ফেলে রেখে ইমরান ও আরেকজন পালিয়ে যায়।
নিহতের দুলাভাই হেলাল মুন্সি বলেন, টুটুলের মেয়ের জামাই ভালো না। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করত। এনিয়ে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। কয়েক মাস আগে টুটুল বিদেশ থেকে বাড়িতে আসে। এরপর জামাইকে তালাক দেয় মেয়ে টুম্পা। এরপর থেকেই জামাই ইমরান নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে টুটুল মধুপুর বাজারে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে জামাই ইমরান ও তার লোকজন টুটুলকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার ফাঁসি চাই।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা বলেন, ৪ বছর আগে টুটুলের মেয়ে টুম্পার সঙ্গে ইমরানের বিয়ে হয়। পরে ইমরান দ্বিতীয় বিয়ে করে। এনিয়ে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। তাদের চার বছর বয়সী আইয়ান নামের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পারিবারিক কলহের জেরে প্রায় তিন বছর বাবার বাড়িতে থাকেন টুম্পা ও তার ছেলে। ৮ মাস আগে টুম্পার বাবা টুটুল সৌদি আরব থেকে বাড়িতে আসেন। ৮ মাস আগে ইমরানকে তালাক দেন টুম্পা। এরপর থেকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন ইমরান। মঙ্গলবার ইমরান গুলি করে হত্যা করল শ্বশুর টুটুলকে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, টুটুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের পাশ থেকে একটি শটগান, কয়েক রাউন্ড গুলি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। নিহতের মুখে গুলির চিহ্ন রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসএম/টিকে