ভারতের গুজরাটের আহমেবাদের বিমান দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজ শেষ বলে জানিয়েছে দেশটির অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। এখন নিহতদের স্বজনরা মরদেহ বুঝে নিতে হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন। তবে মরদেহ বুঝে নিতে হলে করতে হবে ডিএনএ পরীক্ষা।
হাসপাতাল চত্বরে আত্মীয় পরিজনেরা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্ত দিতে অপেক্ষা করেছেন। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, দেহ শনাক্ত করতে কিছুটা সময় লাগবে, কারণ অনেক শরীরই আর শনাক্ত করার মত অবস্থায় নেই।
উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘােষণার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিমানটিতে থাকা ২৪১ জন মারা গেছেন। একমাত্র জীবিত ব্যক্তি রমেশ কুমার বিশ্বাসকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের যে হোস্টেলের ওপরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেখানে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছে ওই মেডিকেল কলেজের ডিন।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মোট কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও সরকারি ভাবে জানানো না হলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, নিহতদের ডিএনএ পরীক্ষার পরেই আনুষ্ঠানিক ভাবে মৃতের সংখ্যা জানানো হবে।
দুর্ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী সিভিল হাসপাতালে উদ্ধার করা মরদেহ ও আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মরদেহ পেতে হলে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে বলে অপেক্ষা করছেন নিহত যাত্রীদের স্বজন ও দুই কেবিন ক্রু ইরফানের বাবা ও সিঙসনের ভাই।
হাসপাতালের ময়নাতদন্তের ঘরের সামনে বিবিসির সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা হয় বিমানবালা সিঙসনের চাচাতো বোন টি থাঙলিঙো হাওকিপের সঙ্গে। তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন, সিঙসনের খবর নিতে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করছেন, তবে কোনো খবরই পান নি তিনি। সিঙসনের মা খুবই চিন্তায় আছে। ওর বাবা নেই, ভাইয়ের ক্যান্সার হয়েছে। পরিবারে রোজগার করত একমাত্র সিঙসন। পুরো পরিবার ওর ওপরেই নির্ভর করত।
সিঙসনের সঙ্গেই ক্রু হিসাবে ওই বিমানে ছিলেন ইরফান। তার বাবা সামির শেখ জানিয়েছেন, ছেলে খুব বেশি ফোন করত না, কিন্তু প্রতিবার বিমান আকাশে ওড়ার আগে আর পৌঁছনাের পরে বাবাকে জানাতেন ইরফান।
সেভাবেই বৃহস্পতিবার দুপুরে এয়ার ইন্ডিয়া থেকে ফোন আসে সামির শেখের কাছে। প্রথমে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি, কারণ ছেলের বিমান তো তখন লন্ডনের দিকে উড়ে গেছে! ফোনে ইরফানের বাবাকে জানানো হয়েছিল—বিমান ভেঙে পড়েছে, ছেলে আর নেই।
সামির শেখ মহারাষ্ট্রের পুনে শহর থেকে তখনই বিমানে করে আহমেদাবাদ রওনা হয়ে হয়েছিলেন ছেলের মরদেহ আনতে। এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মকর্তারা তার ছেলের দেহ শনাক্ত করতে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু পুলিশ ছেলেকে ফিরিয়ে নিতে দিচ্ছে না। বলছে– সব দেহগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা হলে তবেই মরদেহ দেওয়া হবে।
ইরফানের স্ত্রী হাসপাতাল চত্ত্বরে যাকে সামনে পাচ্ছেন, তার কাছেই সাহায্য চাইছেন স্বামীর মরদেহ পাওয়ার জন্য। ইরফানের স্ত্রীর দিকে দেখিয়ে সামির শেখ বলেন, আমরা কী করব এখন! আমরা তো নিশ্চিত ওটা আমার ছেলেরই দেহ, তবুও তিনদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের?
লন্ডনের বাসিন্দা ব্রিটিশ নাগরিক রমেশ কুমার বিশ্বাস বিমানের ১১এ আসনে বসেছিলেন। বিমানের নকশা থেকে জানা যায় ওই আসনের পাশেই ছিল ‘এমারজেন্সি এক্সিট’। তার অন্য পাশে বসেছিলেন রমেশের ভাই অজয় কুমার।
রমেশের আরেক ভাই নয়নকুমার বলেন, ও বুঝতেই পারেনি যে কীভাবে ও বেঁচে গেলাে, কী করেই বা ও বিমান থেকে বেরতে পারলাে। যখন আমরা ঘটনা জানতে পারলাম, আমরা তো ভেঙে পড়েছিলাম। কথা বলার অবস্থায় ছিলাম না কেউ। রমেশ যখন আমাদের ফোন করল, তখন আমার অন্য ভাইয়ের জন্য সে বেশি চিন্তিত ছিল। শুধুই বলছিল অজয়কে খোঁজো, অজয়কে খুঁজে বের কর।
এফপি/এসএন