সময়টা ছিল ৬ নভেম্বর ২০২৩। দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিশ্বকাপে টিকে থাকার আশা ভেস্তে গেলেও ম্যাচটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল অন্য কারণে। সেটি হলো, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে হলে ম্যাচটি জিততেই হতো সাকিব আল হাসানদের। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দিন কিনা জয়-পরাজয় ছাপিয়ে মূল্য আলোচনার ‘টাইমড আউট' বিতর্ক। সাকিব আল হাসানের এক সিদ্ধান্তে সেদিন বিশ্ব ক্রিকেট প্রথম দেখে টাইমড আউট হওয়ার নজির। যে ঘটনা তোলপাড় তোলে ক্রিকেট বিশ্বে।
সেদিন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাটিং পজিশনে গিয়ে গার্ড নিতে না পারায় ‘টাইমড আউট’ হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। একজন ব্যাটার আউট হওয়ার পর অন্য ব্যাটার নেমে ক্রিজে দাঁড়ানোর মধ্যে নির্দিষ্ট সময় থাকে। ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) আইন অনুযায়ী, একজন ব্যাটার ৩ মিনিটের মধ্যে ক্রিজে তৈরি না থাকলে বিপক্ষ দল আপিল করতে পারবে। তবে বিশ্বকাপে এই সময়সীমা কমিয়ে ২ মিনিট করেছিল আইসিসি। ওই দুই মিনিটের মধ্যেই প্রস্তুত হতে পারেননি ম্যাথিউস। যেই সুযোগটাই কাজে লাগায় বাংলাদেশ। তোলে টাইমড আউট দেবার আবেদন। আম্পায়ারও বাধ্য হন আউট দিতে। কোনো বল মোকাবিলা না করেই আউট হয়ে ফিরতে হয় ম্যাথিউসকে। বিতর্কিত ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত জয় পায় বাংলাদেশ।
তবে জয় ছাপিয়ে টাইমড আউট নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কেউ পক্ষে, আবার কেউ বিপক্ষে মত দেন। কেউ কেউ আবার তখনকার বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিবের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বিতর্কিত সেই ঘটনা নিয়ে অবশেষে আবার মুখ খুললেন শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ঘটনার সময়ের রাগ ও হতাশা এখনো তাকে নাড়া দেয়—এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
ইএসপিএনকে দেয়া একটা সাক্ষাৎকারে ম্যাথিউস স্পষ্ট ভাষায় বলেন, 'আমি তখন খুব রেগে গিয়েছিলাম এবং হতাশও হয়েছিলাম। কারণ আমি কোনো ভুল করিনি। খেলার পর যখন ভিডিওটা ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ারদের দেখাই, তখন তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং আমাকে দুঃখপ্রকাশ করেন।'
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ সময় মাঠে নেমেই ব্যাটিং শুরু করার আগেই তাকে ‘টাইম আউট’ দেওয়া হয়। কারণ, তার হেলমেটের স্ট্র্যাপ ভেঙে গিয়েছিল এবং তিনি নতুন হেলমেট আনাচ্ছিলেন। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে ম্যাথিউস বলেছেন, 'ওটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচ ছিল। আমি অনুভব করেছিলাম, আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্য করা হয়েছিল। জানি না তারা কেন ওইভাবে আচরণ করেছিল।'
তার মতে, আম্পায়ারদের আরও কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল। “আমি নিশ্চিত, আমি দুই মিনিটের সময়সীমা অতিক্রম করিনি। আর এটা পরিষ্কার ছিল যে হেলমেটটা মাঠে প্রবেশ করার পরই ভেঙে যায়, আগে নয়। তাই আমার রেগে যাওয়াটা ন্যায্য ছিল,”— বলেন এই লঙ্কান তারকা।
এই মন্তব্যের মাধ্যমে আবারও আলোচনায় উঠে এল সেই ঐতিহাসিক ‘টাইম আউট’ বিতর্ক, যা প্রথমবারের মতো ঘটে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে।
পিএ/টিএ