জনপ্রিয় নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘সন্ধিক্ষণ’ নাটক দিয়েই অভিনয়ে অভিষেক ঘটে মেহজাবীন চৌধুরীর ছোট বোন মালাইকা চৌধুরীর। জোভানের বিপরীতে সেই নাটকটি দর্শকের মাঝে বেশ সাড়া ফেলে। এই নাটকের জন্য সেরা নবাগত অভিনেত্রীর বাইফা পুরস্কারও জিতেছেন মালাইকা।
কিন্তু এরপর ধুমধাম করে তিনি নাটকে কাজ করেননি। বেশ লম্বা বিরতির পর তিনি এবার ঈদুল আজহায় অভিনয়ে ফিরেছেন। মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের নাটকেই আবার ভরসা করেছেন এই তরুণ অভিনেত্রী। আর তাতেই বাজিমাত করলেন মালাইকা। ‘ক্ষতিপূরণ’ নামের ফিকশনটি এখন ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে দুই নম্বরে আছে।
গত ১০ জুন সিনেমাওয়ালা চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে এটি। এতে মা-বাবার প্রতি সন্তানের যত্নশীল হওয়ার ও মানুষের উপকারে সাধ্যমতো এগিয়ে আসার বার্তা দেওয়া হয়েছে। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ইউটিউব ফিল্ম দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শকের জীবন-দর্শন বদলে দিচ্ছে।
অনেকের মতে, মানুষের উপকারে এগিয়ে আসতে ও গ্রামের বাড়িতে মা-বাবার কাছে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে ‘ক্ষতিপূরণ’। ইউটিউব ফিল্মটি কাউকে কাউকে কাঁদিয়েছে, আবেগপ্রবণ করে তুলেছে। প্রেমের গল্পের ভিড়ে এমন বিষয়বস্তুর নাটক উপহার দেওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন নির্মাতা রাজ।
‘ক্ষতিপূরণ’ রচনা করেছেন সিদ্দিক আহমেদ। এর গল্পে দেখা যায়- এক তরুণকে কেউ জানে ত্রিস্তান নামে, কেউবা ডাকে কাফকা কিংবা তলস্তয়, কেউ আবার বলে হুমায়ূন আহমেদ! আসলে সে কে? তার প্রতি কৌতূহলী হয়ে ওঠে তরুণ সাংবাদিক শিরিন। কিন্তু লোকটাকে দরদি মনে হলেও সামনে আসে এক নিষ্ঠুর অতীত। ছেলেটির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান। শিরিন চরিত্রে আছেন মালাইকা চৌধুরী।
ইউটিউব ফিল্মটি চার দিনে দেখা হয়েছে ৪২ লাখ বার। এতে মন্তব্য পড়েছে ৬ হাজারের বেশি। সাব্বির হুসেন নামের একজন প্রবাসী লিখেছেন, “অভিমান করে বাড়ি যাই না। চার মাস আগে দেশে যাওয়ার কথা ছিল। মা-বাবার সঙ্গে অভিমান করে কথা হয়নি প্রায় চার মাস। তখন থেকে সমস্যা। ভেবেছিলাম আর যাবো না দেশের বাড়ি। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখার পর মনে হচ্ছে সবকিছুর পর মা-বাবা তো মা-বাবাই। আমি বাড়ি যাচ্ছি খুব শিগগিরই। আজ থেকে প্রস্তুতি শুরু করলাম। ধন্যবাদ সিনেমাওয়ালার পুরো টিমকে।”
সজিব দরিয়া নামের আরেক প্রবাসীর কথায়, “গল্পটি কিছুটা নিজের জীবনের সঙ্গে মিলে গেলো। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আট বছর হয়ে গেলো প্রবাসে আছি। দাদি আমাকে হাজারবার দেখতে চেয়েছেন, অনেকবার বাড়ি যেতে বলেছেন। কিন্তু যেকোনও সমস্যার কারণে বাড়ি যেতে পারিনি। সেই দাদি মারা গেছেন দেড় বছর হবে। এখন মা ঠিক দাদির মতো প্রতিনিয়ত আমাকে বাড়ি যেতে বলেন। কিন্তু আমার সমস্যার কারণে যেতে পারি না। বুক ফেটে যায় মাকে দেখার জন্য। মা এমন একটা মায়া যা পৃথিবীর অন্য কোনো কিছুতে পাওয়া যায় না। মায়ের ভালোবাসার কাছে সবকিছু তুচ্ছ।”
অন্য এক প্রবাসী লিখেছেন, “সত্যি খুব ভালো লাগলো। চার বছর চলছে বিদেশে আসছি। দুই বছর ধরে মা দেশে যেতে বলেন, কিন্তু সত্যি বলতে ইচ্ছে করেই দেশে যাইনি। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখে মনে হচ্ছে আমার অনেক আগেই দেশে যাওয়া দরকার ছিল। তিন মাসের মধ্যেই দেশে যাবো।”
ইতালি থেকে বাইজিদ হাজরা লিখেছেন, ‘খুব সুন্দর একটি কন্টেন্ট। আমার দেখা সেরা গল্প। আগামী বছর দেশে যাবো মা-বাবা পরিবারের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাতে।’
নাহিদ আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, “ক্যারিয়ারের জন্য আজ একবছর হলো বাড়ি যাচ্ছি না। ক্যারিয়ারের জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছি! ‘ক্ষতিপূরণ’-এর শেষ দিকের সংলাপগুলো শুনে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো।
এবারের ঈদে সবাই শতবার বলার পরেও শুধু ক্যারিয়ারের জন্য বাড়ি যাইনি। ‘ক্ষতিপূরণ’ দেখার পর আমার কান্না থামাতে পারছি না। আম্মু-আব্বুকে শুধু একবার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। বাবাকে বছরে দুইবার জড়িয়ে ধরার সুযোগ হয়। আমার জীবন থেকে দুইবার বাবাকে জড়িয়ে ধরার সুযোগটাও হারিয়ে ফেলেছি। ‘ক্ষতিপূরণ’-এর শেষ দিকে যখন ইয়াশ রোহান বলেন, ‘আমার মৃত্যুর পরে তো কেউই আমাকে মনে রাখবে না।’ আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। বাবা-মা ছাড়া কেউ খবর নেয়নি বেঁচে আছি কিনা। খুব শিগগিরই বাড়ি যাবো। এই পৃথিবীতে আমাদের বলতে শুধু এটুকুই আছে! এতদিন মনে হতো জীবনে উচ্চবিত্ত হওয়াই সব। এজন্য যা ত্যাগ করতে হয় করবো। কিন্তু না, সবকিছু ত্যাগ করলেও পরিবারের সঙ্গে থাকার মুহূর্তগুলো কখনও ত্যাগ করা যায় না। এই সুন্দর উপলব্ধিটুকু ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর হয়েছে। নতুবা আরো কয়েক বছরেও হয়তো বাড়ি যাওয়া হতো না। যিনি এই কন্টেন্ট বানিয়েছেন তার জন্য আশীর্বাদ রইলো।”
এসব অসংখ্য আবেগঘন মন্তব্যে ভরে গেছে নাটকটির কমেন্ট বক্স। ‘ক্ষতিপূরণ’-এ আরো অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী, মনিরা আক্তার মিঠু, রাশেদ মামুন অপু, সুষমা সরকার, এমএনইউ রাজু, সমু চৌধুরী, শরিফ ফারজানা বুশরা, আইমন সিমলা, ইকবাল, শম্পা নিজাম, নওশীন দিশা, মনীষা শিকদার, টুম্পা মাহবুব ও তাজিনাতুন নাহার নওরিন।
ইউটিউব ফিল্মটির আবহ সংগীত তৈরি করেছেন আরফিন রুমি। এছাড়া নতুন একটি গানের সুর-সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি। তার সঙ্গে এটি গেয়েছেন স্বর্ণা। ‘লিখেছি তোমার নাম’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন। চিত্রগ্রহণ করেছেন রাজু রাজ। সম্পাদনা ও রঙ বিন্যাসে রাশেদ রাব্বি।
এসএন