প্রধান উপদেষ্টা-তারেক রহমানের বৈঠককে ভিন্ন খাতে দেখার সুযোগ নেই: এ্যানি

প্রধান উপদেষ্টা বিদেশে গিয়েছেন, সেই সুযোগে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে— এটাকে ভিন্ন খাতে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

সোমবার (১৬ জুন) ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ এর বিচারক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক ১২ বছর আগে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় এ্যানিসহ নয়জনকে খালাসের রায় দেন। রায় শুনে ঢাকার নিম্ন আদালতে পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির (সিআরইউ) কার্যালয়ে এ কথা বলেন শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

তিনি বলেন, অত্যাচার, মানসিক চাপ দিয়ে আমাদের মতো রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে, এটার বাইরেও অনেক নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন। আমরা পালিয়ে বেরিয়েছি, বাসা-বাড়িতে থাকতে পারিনি। আমাদের এত অত্যাচার, হয়রানি করা হয়েছে।

এগুলো ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের পরিকল্পিত কাজ, যেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, প্রতিবাদ করতে না পারি। তাদের দুর্নীতি, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারি। তবে আমরা মামলা, হামলার কাছে নত স্বীকার করিনি। আন্দোলনকে বেগবান করেছি। আন্দোলনকে বেগবান করতে গিয়ে বারবার গ্রেফতার ও নির্যাতিত হয়েছি। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন।

এ্যানি বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের আন্দোলনের ফলস্বরূপ এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে একটি কমিশন হবে। সারাদেশের মিথ্যা, সাজানো মামলাগুলো খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং শেষ হবে। এখন পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে আমার মামলাগুলি যেহেতু প্রত্যাহার হয়নি, অনেকের মামলাও প্রত্যাহার হয়নি। এটা একটি কষ্টের জায়গা।

আশা করবো, এ সরকারের কাছে প্রত্যাশার জায়গা থেকে, সারাদেশে অনেক নেতাকর্মী আছেন। এরা শুধু বিএনপি নয়, এরা অ্যান্টি আওয়ামী লীগ। মুভমেন্টে ছিলেন। এরা ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে লড়াই ও সংগ্রাম করেছেন। এখনো অনেকে জেলে আছেন। দ্রুত এদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন। মামলা প্রত্যাহারের জন্য কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। বলেন, আমরা তো সবকিছু পারি না। আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। ওই সীমাবদ্ধতা সরকারের কাছে।

এ ছাত্রনেতা বলেন, স্বাধীন যে নির্বাচন ব্যবস্থা, যেটা অতীতে ছিলো না, সেটা খুব জরুরি প্রয়োজন। স্বাধীন বিচার বিভাগ যদি থাকে, তাহলে কোনো সরকার ইচ্ছে করলেই ফ্যাসিবাদ গড়ে তুলতে পারবে না। আর ফ্যাসিবাদ হলে স্বাধীন বিচার বিভাগও কিন্তু ধরাশায়ী হবে। তখন ফ্যাসিবাদী সরকার গড়ে উঠবে না। একটি জনগণের সরকার থাকবে। আমার বিশ্বাস দেশে নির্বাচন আবহ তৈরি হয়েছে। যে সুন্দর একটি বৈঠক হয়েছে, তা আমাদের মাঝে স্বস্তি এনে দিয়েছে। একটি উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে আমরা সবাই এগিয়ে যাই।

তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস যে কথাগুলো বলেছেন, যে আলোচনাগুলো বেরিয়ে এসেছে। দেশে আলোচনা হয়েছে, দেশের বাইরে আলোচনা হয়েছে।

তারেক রহমান দেশে থাকলে, দেশেই আলোচনা হতো। একটা বড় দল, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দল হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে তো সবার আগেই কথা বলার দরকার ছিল। কিন্তু উনি (তারেক রহমান) কি কারণে, কোন প্রেক্ষাপটে দেশের বাইরে গেছেন, এটা তো অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বুঝতে হবে। সুতরাং প্রধান উপদেষ্টা বিদেশে গিয়েছেন।

সেই সুযোগে তারেক রহমানের সাথে একটা বৈঠক হয়েছে, এটাকে ভিন্ন খাতে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে হবে। সবাই মিলে লড়েছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। সবাই মিলে একটা বৈঠক, আলাদা বৈঠক একই উদ্দেশ্য। সুতরাং এখানে দ্বিমত করার সুযোগ আছে বলে আমি দেখি না।

সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সামনে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ আমাদের তৈরি করতে হবে। যেখান থেকে জাতি দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা 'জাতির মুক্তি'।

এসময় কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মামুন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, এ্যানির আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী, আইনজীবী মো. তানজিম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ্যানির সাথে খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন- আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ইসহাক সরকার, কাজী আবুল বাশার, নজরুল ইসলাম খান টিপু, এম এ সৈয়দ মন্টু, আ. সাত্তার ও মো. সালাউদ্দিন।

এ বিষয়ে এ্যানির আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায় থেকে আসামিদের খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলা চলার মতো কোনো উপাদান না থাকায় এ পর্যায়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর ১৮ দলের ডাকা হরতাল চলাকালে রাজধানীর সূত্রাপুর থানাধীন এলাকায় একটি লেগুনায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুষ্কৃতকারীরা। এতে ওই গাড়ির পাঁচজন দগ্ধ হন। ঘটনার পরদিন ১১ নভেম্বর সূত্রাপুর থানার তৎকালীন এসআই নয়ন ফারকুন বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২১ মে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ার আলম আজাদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে এ মামলায় শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ নয়জনের বিচার শুরু হয়।

কেএন/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দুপুরের মধ্যে ৮ জেলার ঝড়ের আভাস Jun 17, 2025
img
ইসরায়েলে বাজছে সতর্কতামূলক সাইরেন, আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছে মানুষ Jun 17, 2025
img
হোয়াইট হাউজে সিচুয়েশন রুমে জরুরি বৈঠক Jun 17, 2025
img
জি-৭ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফিরছেন ট্রাম্প Jun 17, 2025
img
ইসরায়েলি শহর খালি করার নির্দেশ বিপ্লবী গার্ডের Jun 17, 2025
img
তেহরানে ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ দূতাবাস Jun 17, 2025
img
তেহরানের পূর্বাংশে বিস্ফোরণ Jun 17, 2025
img
তেলুগু হিট দিয়েও কেন পিছিয়ে পড়লেন ঐশ্বরিয়া রাজেশ Jun 17, 2025
img
ভূতের ভয় ক্যাটরিনার Jun 17, 2025
img
সাহসী অভিনেত্রীদের হাত ধরে পাল্টাচ্ছে ভারতীয় সিনেমা Jun 17, 2025
img
“তেহরান দ্রুত খালি করুন”— ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যে হইচই Jun 17, 2025
img
সাভারে যৌথবাহিনীর অভিযান, দেশীয় অস্ত্রসহ আটক ৫ Jun 17, 2025
img
হামলার খবর চাপা দিতে ব্যস্ত ইসরায়েলি গণমাধ্যম Jun 17, 2025
img
ইরানি হামলায় হাইফার তেল শোধনাগার ধ্বংস, নিহত ৩ Jun 17, 2025
img
এই যুদ্ধের জন্য দায়ী নেতানিয়াহু: বার্নি স্যান্ডার্স Jun 17, 2025
img
আইনশৃঙ্খলা সভায় গিয়ে আটক ইউপি চেয়ারম্যান Jun 17, 2025
img
যুদ্ধ এড়াতে এরদোয়ানকে ফোন ইরানের প্রেসিডেন্টের Jun 17, 2025
img
মধ্যরাতে ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন, নিরাপদ আশ্রয়ে নাগরিকরা Jun 17, 2025
img
ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্তে যুদ্ধ নয়, কংগ্রেসের অনুমতি চাই Jun 17, 2025
img
স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে প্রবাসীর বাড়িতে প্রেমিকার অনশন Jun 17, 2025