তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার প্রভাব ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে ইরান। উপসাগরীয় অঞ্চলের তিন দেশ সৌদি আরব, কাতার এবং ওমানের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি তেহরান এই আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার ইরানের অন্তত দুটি ও আঞ্চলিক তিনটি সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে যুদ্ধবিরতি চেয়ে ওই তিন দেশের কাছে ইরানের দ্বারস্থ হওয়ার তথ্য জানিয়েছে। রয়টার্স বলছে, পারমাণবিক আলোচনায় নমনীয়তার শর্ত দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার প্রভাব ব্যবহার করে ইসরায়েলকে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর অনুরোধ জানিয়েছে ইরান। উপসাগরীয় অঞ্চলের তিন দেশ কাতার, সৌদি আরব ও ওমানকে ট্রাম্পের ওপর এই বিষয়ে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
উপসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের নেতা ও শীর্ষ কূটনীতিকরা পুরো সপ্তাহজুড়ে পরস্পরের সঙ্গে আঞ্চলিক এই সংকটে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তারা তেহরান, ওয়াশিংটন ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেছেন। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের শত্রুতায় সবচেয়ে বড় এই সংঘাত যেন ব্যাপক আকার ধারণ না করে, সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ইরানি একটি সূত্র বলেছে, যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো গেলে ইরান পারমাণবিক আলোচনায় নমনীয় হতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘‘এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এটা নিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো ভীষণ উদ্বিগ্ন।’’
উপসাগরীয় ওই সূত্র বলেছে, কাতার, ওমান ও সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে, যাতে যুদ্ধবিরতিতে রাজি ও পারমাণবিক চুক্তির আলোচনায় ফিরে আসার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে ওয়াশিংটন।
ইরান ও উপসাগরীয় দেশগুলোর যোগাযোগের বিষয়ে অবগত আঞ্চলিক এক কর্মকর্তা বলেছেন, কাতার ও ওমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তেহরান; যাতে তারা আবারও পারমাণবিক আলোচনায় ফেরার বিষয়ে মধ্যস্থতা করে। তবে সেজন্য আগে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতের শর্ত দিয়েছে তেহরান।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ইরান স্পষ্টভাবে ওমান ও কাতারকে জানিয়েছে যে, তারা আক্রান্ত অবস্থায় কোনও আলোচনা করবে না। এমনকি ইসরায়েলের হামলার জবাব দেওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা গুরুতর আলোচনায়ও বসবে না।
তবে এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাতার, ওমান ও সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, হোয়াইট হাউস ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ও কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা টাচি হানেগবি সোমবার আর্মি রেডিওকে বলেছেন, ‘‘যুদ্ধ থামানোর পরিকল্পনা করার সময় এখন নয়। কেউ যুদ্ধ শুরু করে তিনদিন পরই শেষ করতে চায় না।’’
এদিকে, সোমবার কানাডায় বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর সম্মেলনে অংশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান এই যুদ্ধে জয়ী হচ্ছে না এবং ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতের অবসানে আলোচনা করতে চায় তেহরান। আঞ্চলিক এই সংঘাতকে ‘‘উভয় পক্ষের জন্যই বেদনাদায়ক’’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট বলেন, বেশি দেরী হয়ে যাওয়ার আগেই তারা (ইরান) যেন অবিলম্বে আলোচনায় বসে। এরপর ট্রাম্পের কাছে এই সংঘাতে সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে ট্রাম্প বলেন, এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না তিনি।
এফপি/টিএ