ক্ষমতার লোভে কিংবা বিশেষ কাউকে প্রতিষ্ঠিত করতে নির্বাচন পেছালে জনগণের আস্থা ভেঙে যাবে : জিল্লুর রহমান

সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘ক্ষমতায় থাকার লোভে কিংবা বিশেষ কাউকে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকার যদি সময় বাড়াতে থাকে তাহলে জনগণের আস্থাটা ভেঙে যাবে।’ গতকাল সোমবার (১৬ জুন) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এসব কথা বলেছেন।

তিনি আরো বলেছেন, শেখ হাসিনার পতনের এক বছর পরেও নির্বাচন নিয়ে ক্যালেন্ডারের হিসাবে যেন দেশের সবচেয়ে জটিল গণিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ বলছে ডিসেম্বরে ভোট হোক, কেউ বলছে সময় দাও সংস্কারের জন্য।

আর কেউ চুপচাপ বসে দেখছে কে আগেই হারে কে যেতে। এর মধ্যেই ফেব্রুয়ারির কথা সামনে চলে এসেছে। এই বিতর্কে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ এখন দেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নিয়েছেন।

ঠিক সেই সময় যখন সরকার ছিল স্তব্ধ প্রশাসন ভেঙে পড়েছিল। আর জনগণ ছিল বিস্মিত এবং বিক্ষুব্ধ। তিনি এখন ভোটের জন্য ময়দান গুছিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, গুছিয়ে নিচ্ছেন।

জিল্লুর রহমান বলেছেন, সংস্কার করছেন কিছুই হচ্ছে না। সমঝোতার চেষ্টা করছেন কোনো লক্ষণ নেই। কিন্তু তার সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলো রীতিমতো বিভ্রান্ত। বিশেষ করে জাপানের টোকিওতে দাঁড়িয়ে যখন তিনি বললেন, ডিসেম্বরে নয়, ভোট হতে পারে জুনে। তখনই যেন ঘরে বাইরে শুরু হলো জল্পনা-কল্পনা।

আর ঈদের আগে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বললেন—এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। লন্ডনে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার পরে এটা এসে দাঁড়াল দুই পক্ষের সম্মতিতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় বা রমজানের এক সপ্তাহ আগে। যেটা নিয়ে আবার অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যারা দেশের ভেতরে ছিল তারা সন্তুষ্ট নয়।

২০২৪ সালে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এটা আমরা সবাই জানি। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং জানুয়ারি নাগাদ একটি সংস্কার কমিশন গঠন করে। একটি না ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের শক্তি বৃদ্ধি সংবিধান সংশোধনের পথ তৈরি নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব নির্ধারণ ।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেনাপ্রধানও বলেছিলেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তারা মনে করেন যে, সংস্কারের জন্য এত সময় নিলে ভোট আর ভোটের মত হবে না। উল্টো ক্ষমতায় থাকার লোভে কিংবা বিশেষ কাউকে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকার যদি সময় বাড়াতে থাকে তাহলে জনগণের আস্থাটা ভেঙে যাবে।

আরেকদিকে জামায়াত কিংবা এনসিপি বলছে, সংস্কার আগে শেষ হোক তারপর ভোট। কেউ বলছে, ফেব্রুয়ারি ইতিমধ্যেই সরকার এবং বিএনপির মধ্যে একটা সমঝোতার কথা আমরা শুনেছি। কেউ বলছে, রমজানের আগেই নির্বাচন হোক।

আবার কেউ সময় চায় জুন পর্যন্ত। আবার কেউ বলছে, শেখ হাসিনার বিচার আগে করতে হবে। সমস্ত সংস্কার শেষ করতে হবে। প্রধান প্রধান সংস্কার শেষ করতে হবে, তার পরে নির্বাচন- তো সেই মোহভঙ্গের মাঝেই প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে। যখন তিনি বলছিলেন যে জুনে নির্বাচন এবং তারপর যখন তিনি এপ্রিলের কথা বললেন- রাজনীতিতে এমন সময়ানুবর্তিতার লড়াই নতুন নয়। 

টিকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সরকার পতনের তিন মাস পর নেপালে ফের অলির জোয়ার Dec 14, 2025
img
খুলনায় অস্ত্র কারখানার সন্ধান, গ্রেপ্তার ৩ Dec 14, 2025
img
উত্তরায় জুলাই রেবেলস সংগঠনের এক সদস্যের ওপর হামলা Dec 14, 2025
img

দ্য ডিসেন্টের বিশ্লেষণ

হাদির ওপর হামলার ঘটনায় দ্বিতীয় সন্দেহভাজন শনাক্ত Dec 14, 2025
img
খালেদা জিয়ার সুস্থতা মানেই গণতন্ত্রের আশা : আজহারুল ইসলাম মান্নান Dec 14, 2025
img
বিদায়ী ম্যাচের আগে জন সিনার হৃদয়স্পর্শী বার্তা Dec 14, 2025
img
পঞ্চগড় সীমান্তজুড়ে বিশেষ সতর্কতা Dec 14, 2025
img
দেশব্যাপী বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৫০৬ Dec 14, 2025
img
আহত শান্তিরক্ষীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ Dec 14, 2025
img
সাফল্যের পেছনে ভাগ্য নয়, কর্মই আসল : কাজল Dec 14, 2025
img
ঢাকার ৩ এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ Dec 14, 2025
img
একজন মা হিসেবে সচেতন হওয়ার বার্তা দিলেন কোয়েল Dec 14, 2025
img
শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় জামায়াত আমিরের শোক Dec 14, 2025
img
ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াসে ক্যামিও চরিত্রে আসছেন রোনালদো, ইঙ্গিত ভিন ডিজেলের Dec 14, 2025
img
আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস Dec 14, 2025
img
লোকদেখানো আবেগের কোনো মূল্য নেই বললেন অভিনেতা Dec 14, 2025
img
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহতের ঘটনায় তারেক রহমানের শোক Dec 14, 2025
img
সুদানে হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক প্রকাশ Dec 14, 2025
img
দারিদ্র্য আর অশিক্ষা এক নয় বললেন অভিনেতা Dec 14, 2025
img
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাসে আগুন Dec 14, 2025