ইসরায়েলের একের পর এক হামলার মধ্যে তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদে সরানোর প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হওয়ার কথা বলেছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক।
যুদ্ধাবস্থার কারণে নিরাপত্তা উদ্বেগের পাশাপাশি বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতার কথা তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, তেহরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা বেশি ঝুঁকিতে থাকায় প্রথম দফায় সরকার তাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রাথমিক খরচ তেহরানে বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছে থাকা অর্থ দিয়ে মেটানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে জরুরিভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ না পাঠাতে পারার কথা তুলে ধরে আলম সিদ্দিক বলেন, “অর্থ প্রেরণ কষ্টসাধ্য। স্থানান্তরের জন্য যে অর্থ লাগবে আমরা পাঠানোর চেষ্টা করছি। ওখানে ব্যাংকিং চ্যানেল কাজ করে না।
“সেজন্য এ বিষয়টি আমাদের স্থানান্তরের একটু বিলম্বের কারণ হচ্ছে। স্থানান্তর প্রক্রিয় শুরু হয়ে গেছে এবং আমরা বিভিন্নভাবে স্থানান্তরের জন্য বেশ বড় একটা অর্থ লাগবে সেটা পাঠানোর চেষ্টা করছি। আর ওখানে আমাদের যে তহবিল আছে সেটা দিয়ে স্থানান্তর শুরু হয়ে গেছে।“
অর্থ পাঠানোর চ্যালেঞ্জ সমাধান করা নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অতিরিক্ত টাকা পাঠাব। আমাদের কিছু টাকা মিশনের কাছে আছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমরা যতটা সম্ভব বন্ধু রাষ্ট্রগুলো থেকে সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করছি।
“ইরানের কাছ থেকেও আমরা সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের যতগুলো চ্যানেল মেকানিজম খোলা আছে, সবগুলোতে চেষ্টা করছি। তবে মনে রাখতে হবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো কিছু এত সহজে হয় না।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে আগে থেকে তৃতীয় কোনো দেশ, অর্থাৎ যার সঙ্গে ইরানের মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবস্থা আছে, তার মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়ে থাকে। যুদ্ধের কারণে সেটা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশিদের তেহরান থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “এখনকার সিদ্ধান্ত হল, তেহরান থেকে যতটুকু দূরত্বে গেলে নিরাপদে থাকতে পারে তারা যেন তেমন নিরাপদ স্থানে সরে যায়। এই মুহূর্তে ইরান ত্যাগ করার কোনো ব্যবস্থা নাই।
“বিমান যোগাযোগ বন্ধ এবং স্থল পথে যাওয়া হয়তো সম্ভব কিন্তু তা নিরাপদ হবে না। যার জন্য আমরা তাদের তেহরান থেকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।”
তিনি বলেন, ইরানে থাকা প্রায় দুই হাজার বাংলাদেশির মধ্যে ৪০০ জনের মতো তেহরানে রয়েছেন।
“আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা তেহরানে আছে। তারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছে। তাদের এবং আমাদের দূতাবাসে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য এখন কাজ করছি, যাতে এরা নিরাপদে থাকতে পারে।”
তেহরানে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তেহরানে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে ১০০ জন দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হটলাইনে যোগাযোগ করে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এই ১০০ জনের সঙ্গে দূতাবাসের ৪০ জন কর্মীকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টার পর ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা এবং সামরিক কমান্ডারদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলা শুরু হয়। দুই দেশের হামলা পাল্টা হামলা পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে ইরানে বসবাসরত সকল বাংলাদেশি নাগরিক এবং তাদের স্বজনদের জরুরি যোগাযোগের জন্য হটলাইন চালু করেছে সরকার।
প্রাথমিকভাবে তেহরান থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার পর পরের ধাপে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করার কথা দিয়ে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের পদক্ষেপ হচ্ছে, বাংলাদেশিদের তেহরান থেকে যত দূর গেলে নিরাপদে থাকতে পারে ব্যবস্থা করা। থাকার জায়গা ভাড়া করে তাদের রাখা। পরবর্তীতে তারা যদি পাকিস্তানে যেতে চায় বা তুরস্কে যেতে চায় পৌঁছে দেব।”
বাংলাদেশিদের হতাহতের কোনো তথ্য না থাকলেও ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের যে ভবনে সোমবার ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে, সেখানে ৮ জন বাংলাদেশি থাকার তথ্য দেন রুহুল আলম সিদ্দিক।
তিনি বলেন, “ইরানের রেডিও ভবনে হামলার সময় আট বাংলাদেশি ওখানে ছিলেন। তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তারা ভালো আছেন। তারা সম্ভবত ইরানের বাংলা বিভিাগ আছে, তারা ওখানে কাজ করে।”
ইসরায়েলি আক্রমণে তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের চ্যান্সারি ভবন ঝুঁকিতে থাকার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “এতটুকু বলতে পারি, আমাদের চ্যান্সারি ভবন, যেটা অফিস এবং রাষ্ট্রদূতের বাসভবন; এ দুটোতে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি। রাষ্ট্রদূত গতরাতে (সোমবার) তার বাসা ছেড়ে একটু নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছিলেন।”
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ খুব দ্রুত বন্ধ হওয়ার লক্ষণ না থাকার কথা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, “এই যুদ্ধের পরিণতি আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে, সেটা আমরা জানি।
“আমরা ইউক্রেইন যুদ্ধ দেখেছি। সেটি দীর্ঘায়িত হওয়ায় আমরা কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। মধ্যপ্রাচ্য অর্থনৈতিকভাবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় যে, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।”
এফপি/টিএ