ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যাতে জড়িয়ে না পড়ে, সেই দাবিতে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী যে তিনটি রণতরী মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছে, সেগুলো যেন প্রতিরক্ষামূলক উদ্দেশ্যে সেখানে থাকে, হামলা না চালায়। সংঘাতে জড়াতে চায় না মার্কিনিরা।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত স্তিমিত না হয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছে। তেহরানের নজিরবিহীন হামলার মুখে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাইলে দেশটি তাতে সাড়া দিতে পারে বলে আভাস মিলছে। এতে তেহরানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের সরাসরি যুদ্ধে নামার শঙ্কা বাড়ছে।
এমন অবস্থায় গত কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি আরও বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর তৃতীয় একটি ডেস্ট্রয়ার প্রবেশ করেছে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে। আর একটি দ্বিতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ পাঠানো হচ্ছে আরব সাগরের দিকে। এরই মধ্যে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এখনই হামলার চূড়ান্ত নির্দেশ দিচ্ছেন না তিনি।
এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র যেন ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে, সেটাই বিক্ষোভের মূল দাবি। তারা বলছেন, ইসরায়েল বিনা উস্কানিতে ইরানে হামলা চালিয়েছে। এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমি ইরানে যুদ্ধ চাই না। নেতানিয়াহু ভাবছেন তাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র আছে। কোনো তথ্য ছাড়াই ইরানে হামলা চালাচ্ছে।
ইরানে যুদ্ধ নয়, ইসরায়েলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়– এমন নানা ধরনের যুদ্ধবিরোধী স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ ও যুক্তরাষ্ট্রের না জড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্কেও। ইরানে হামলার হুমকি এবং গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানান বিক্ষোভকারীরা।
মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানান যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষও। ১৮ বছর বয়সী কলেজছাত্র বলেন, এটি তাদের যুদ্ধ, এটি আমাদের যুদ্ধ নয় এবং আমি আশা করি, এটি আমাদের যুদ্ধে পরিণত হবে না। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা উচিত। কারণ, এই মুহূর্তে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে এবং তারা ইরানে হামলা করেছে সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে।
অন্যদিকে, চলমান সংঘাত এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা নিয়ে ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন বলেছেন, বেশির ভাগ জনগণ চান না যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি যুদ্ধে জড়াক। তিনি বলেন, ভার্জিনিয়া একটি সেনাবাহিনীবান্ধব রাজ্য। তার পরও সেখানকার মানুষ তাঁকে যুদ্ধ না চাওয়ার বার্তা দিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার বিষয়টি মার্কিনিদের কাছে নতুন কোনো ঘটনা নয়। বহু মার্কিন নাগরিকের আত্মীয়স্বজন এসব যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন। আবার অনেকেই যুদ্ধ-পরবর্তী ট্রমা নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। ফলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এই যুদ্ধগুলো এখন তাদের জন্য অপ্রয়োজনীয়।
যুক্তরাষ্ট্রে চালানো সাম্প্রতিক কিছু জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ আমেরিকান চান না যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল-ইরান বা গাজা যুদ্ধের মতো সংঘাতে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করুক। ১৮ জুন সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, ৫৩ শতাংশ ট্রাম্প সমর্থক এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপের বিরোধী। এ ছাড়া ৮০ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, যুদ্ধ নয়, ইরানের সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত কূটনীতি ও নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
কেএন/এসএন