ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যেই শিশুদের ওপর গুরুতর সহিংসতার অভিযোগে মধ্যপ্রাচ্যের দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলকে ‘কালো তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতিসংঘের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন ‘চিলড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’-এ তথ্যটি জানানো হয়।
এ নিয়ে দ্বিতীয় বছরের মতো তালিকায় স্থান পেল ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটি। এমন এক সময় ইসরায়েলকে কালো তালিকাভুক্তির ঘোষণা এলো যখন গাজায় প্রায় ২০ মাস ধরে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে তারা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের ওপর সহিংসতা নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছে। সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে গাজা উপত্যকা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে, যার জন্য মূলত দায়ী ইসরায়েলি বাহিনী।
জাতিসংঘের যাচাইকৃত তথ্য মতে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ৪১ হাজার ৩৭০টি গুরুতর সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে শুধু ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও ইসরায়েলে ঘটেছে আট হাজার ৫৫৪টি।
এসব ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ৯৫৯ শিশু। গাজায় এক হাজার ২৫৯ শিশু নিহত এবং ৯৪১ শিশু আহত হয়েছে। এছাড়া পশ্চিম তীরে ৯৭ ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যুর তথ্যও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা ও অঙ্গহানি, যৌন সহিংসতা, স্কুল ও হাসপাতালের ওপর হামলার ঘটনা।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও ইসরায়েলে শিশুদের ওপর এত মাত্রার সহিংসতায় আমি মর্মাহত। তিনি ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্কুল ও হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে এবং বিস্ফোরক অস্ত্র ব্যবহারে সংযত থাকতে হবে।
প্রতিবেদনে লেবাননেও ইসরায়েলের হামলায় পাঁচ শতাধিক শিশু নিহত বা আহত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
ইসরায়েলের জাতিসংঘ মিশন এখনো এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস এবং ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডসকেও দ্বিতীয়বারের মতো কালোতালিকায় রাখা হয়েছে।
গাজা ছাড়াও চলতি বছরে শিশুদের ওপর সহিংসতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কঙ্গো (প্রায় ৪ হাজার), সোমালিয়া (প্রায় ২ হাজার ৫০০), নাইজেরিয়া (প্রায় ২ হাজার ৫০০), হাইতি (প্রায় ২ হাজার ২০০)। সবচেয়ে বেশি সহিংসতা বৃদ্ধির হার দেখা গেছে লেবানন (৫৪৫%), মোজাম্বিক (৫২৫%), হাইতিতে (৪৯০%), ইথিওপিয়ায় (২৩৫ শতাংশ) ও ইউক্রেনে (১০৫ শতাংশ)।
কেএন/টিকে