সাইবার জগতে নজরদারি আরও শক্তিশালী করতে ‘একক ভার্চুয়াল আইডি’ চালু করছে চীন। এ যেন নিরাপত্তা আর পরিচয় সুরক্ষার অজুহাতে ডিজিটাল স্বৈরতন্ত্রের দিকে আরও একধাপ অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টা। অনলাইনে বেনামি থাকা চীনে বহু আগে থেকেই কঠিন হয়ে উঠেছে। এবার সেই কঠোরতা আরও বাড়াতে যাচ্ছে দেশটির সরকার।
জুলাই থেকে চালু হচ্ছে ‘একক ভার্চুয়াল আইডি’ ব্যবস্থা, যা দিয়ে একজন ব্যবহারকারী সমস্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ওয়েবসাইটে সাইন ইন করতে পারবেন একই আইডি দিয়ে। মে মাসের শেষ দিকে এই নতুন নিয়ম ঘোষণা করে চীনা সরকার। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকেই এটি কার্যকর হচ্ছে। সরকারের দাবি, এটি নাগরিকদের পরিচয় রক্ষায় সহায়ক হবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতিকে সুশৃঙ্খল রাখবে।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ‘এই পদক্ষেপ মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করবে’। গবেষকরা এটিকে বলছেন ‘ডিজিটাল স্বৈরতন্ত্রের অবকাঠামো’, যেখানে ব্যবহারকারীকে রিয়েল টাইমে নজরদারি ও ব্লক করা যাবে।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রফেসর আশঙ্কা করছেন, একসময় এমন হবে যে নাগরিকরা না চাইলেও এই আইডি ব্যবস্থায় ঢুকতে বাধ্য হবেন। আর একটি কেন্দ্রীয় ডেটা প্ল্যাটফর্ম মানেই বড় হ্যাকিং ঝুঁকি। যার নজির ২০২২ সালের সেই ১০০ কোটি তথ্য ফাঁসের ঘটনায় পাওয়া গেছে।
জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এই সেবা ‘স্বেচ্ছাসেবী’ হলেও বিভিন্ন খাতকে যুক্ত হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম এটিকে বলছে ‘ব্যক্তিগত তথ্যের বুলেটপ্রুফ ভেস্ট’। যা তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি কমাবে।
যদিও এই আইডি ব্যবস্থার খসড়া প্রস্তাবের পর অনেক বিশেষজ্ঞ ও আইনবিদ এর বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত নিয়মে তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এক বিখ্যাত আইন প্রফেসর বলেছিলেন, ‘এটি যেন প্রত্যেক নাগরিকের ওপর নজরদারির ডিভাইস বসানো’। তার সেই পোস্ট মুছে ফেলা হয় এবং ওয়েইবোতে তার অ্যাকাউন্টও তিন মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু জনমতের তেমন প্রতিফলন দেখা যায়নি। কারণ, সমালোচনার জায়গাগুলোও এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে।
এফপি/ এসএন