‘পারফেকশনিস্ট’ নামে বলিউডে পরিচিত আমির খান অভিনয়জীবনে বহু প্রশংসিত ও জনপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন। তবে তার ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য একটি দিক নিয়ে বরাবরই আলোচনা ও বিতর্ক চলেছে—তার অনেক ছবিই সরাসরি কোনো বিদেশি বা ভারতীয় চলচ্চিত্রের রিমেক, আবার কিছু ছবির ক্ষেত্রে গল্প বা থিমের মিল থাকায় সেগুলিকে ‘অনুপ্রাণিত’ বলা হয়েছে। কখনো আবার গুজবের জন্ম দিয়েছে সিনেমার উৎস নিয়েই।
সম্প্রতি আবার এই আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে কয়েকটি ছবি। তার মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ‘সিতারে জমিন পর’। ২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি স্পেনের বিখ্যাত ছবি ‘কাম্পিওনেস’-এর সঙ্গে এতটাই মিলে যায় যে অনেকে এটিকে রীতিমতো রিমেক বলেই ধরে নিয়েছেন। বিশেষ সক্ষমতাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত একটি দল এবং এক বিতাড়িত কোচকে ঘিরে ছবির গল্প—যা স্প্যানিশ ছবির মূল কাঠামোর সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
এর আগেও ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাল সিং চাড্ডা’ ছিল অফিশিয়ালি অনুমোদিত রিমেক, যার মূল ছিল হলিউডের কালজয়ী ছবি ‘ফরেস্ট গাম্প’। ছবিটি পারফরম্যান্সে যতই প্রশংসা অর্জন করুক না কেন, ব্যবসায়িক দিক থেকে তা ছিল হতাশাজনক।
১৯৯২ সালের ‘জো জিতা ওহি সিকান্দার’ ছবির ক্ষেত্রেও অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বারবার উঠে এসেছে আমেরিকার ‘ব্রেকিং অ্যাওয়ে’-র নাম। দুই ছবিেই রয়েছে যুব প্রতিযোগিতা, ক্রীড়ার আবেগ এবং পারিবারিক সংকট।
‘গজিনী’ ছবিটি তো রীতিমতো ডাবল রিমেক হিসেবে পরিচিত। এটি মূলত একটি তামিল ছবির রিমেক, কিন্তু সেই তামিল ছবিও আবার আমেরিকার ‘মেমেন্তো’ ছবি থেকে অনুপ্রাণিত বলে ধরা হয়। এই ছবির জটিল নির্মাণকৌশল এবং স্মৃতিহীনতার দ্বন্দ্ব দর্শকদের আকর্ষণ করলেও মূল গল্প নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে।
‘আকেলে হম আকেলে তুম’ ছবিটি বহুদিন ধরেই তুলনা পেয়েছে ‘ক্রেমার ভার্সেস ক্রেমার’-এর সঙ্গে। বিবাহবিচ্ছেদ ও সন্তানের হেফাজত নিয়ে আবেগঘন কাহিনী—যদিও সরাসরি অনুকরণ নয়, বিষয়বস্তুতে মিল অস্পষ্ট নয়।
১৯৯৫ সালের ‘বাজি’ ছবির ক্ষেত্রেও আলোচনা হয়েছে ‘ডাই হার্ড’ অনুপ্রেরণার। একক লোকেশনে বন্দিদশা, পুলিশি থ্রিলার এবং চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই—যা হলিউড ছবির আদলে গড়া বলেই অনেকের ধারণা।
‘ফানা’ ছবিটি নিয়েও রয়েছে অনেক মতভেদ। এই ছবিতে প্রেমিকের গুপ্তচর হয়ে ওঠা, বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রেমের সংঘাত—এই প্লট আগেই দেখা গিয়েছে ব্রিটিশ ছবি ‘আই অফ দ্য নিডল’ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ‘শিরি’-তে।
এই বিতর্কিত অনুপ্রেরণা বা রিমেক প্রসঙ্গে মতভেদ থাকলেও একটা কথা স্পষ্ট—আমির খানের ছবি কেবল এক দেশের গণ্ডিতে আটকে থাকেনি। গল্পের আঙ্গিক, নির্মাণশৈলী ও চরিত্রের গভীরতায় তার ছবি বারবারই আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। যদিও উৎস নিয়ে সন্দেহ বা বিতর্ক রয়েছে, তবু এসব ছবির সাংস্কৃতিক প্রভাব এবং জনপ্রিয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
এসএম