যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ইরানের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। খামেনির দেওয়া চিঠি নিয়ে সোমবার (২৩ জুন) রাশিয়ায় পৌঁছেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ইতোমধ্যেই চিঠিটি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। খামেনির ওই চিঠি পুতিনের কাছে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে ইরান হতাশ। যদিও প্রেসিডেন্ট পুতিন ইসরায়েলি হামলাগুলোর নিন্দা করেছেন। ইরান মনে করছে, এমন সংকটপূর্ণ মুহূর্তে রাশিয়ার উচিত আরও সরাসরি ও কার্যকরভাবে পাশে দাঁড়ানো।
চিঠিতে কী ছিল
চিঠির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ না করা হলেও, বিশ্লেষকদের মতে এতে প্রধানত ৪টি বার্তা উঠে এসেছে: রাশিয়ার সক্রিয় ও প্রকাশ্য সমর্থন কামনা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও সম্ভাব্যভাবে প্রতিরোধমূলক অবস্থান গ্রহণের অনুরোধ।
বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচি রক্ষায় রাশিয়ার ভূমিকা: ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে আন্তর্জাতিকভাবে বৈধতা দিতে রাশিয়ার জোরালো অবস্থানের দাবি।
মধ্যপ্রাচ্যে রুশ মধ্যস্থতার প্রস্তাব
পুতিনকে মার্কিন-ইরান উত্তেজনা নিরসনে আরও সক্রিয় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মস্কোতে পৌঁছে আরাগচি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস (TASS)-কে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান ও রাশিয়া নিজেদের অবস্থান সমন্বয় করছে। আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
পুতিন ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ইসরায়েল মস্কোকে আশ্বস্ত করেছে যে, ইরানে বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রুশ প্রকৌশলীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
একই সঙ্গে তিনি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, রাশিয়া ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার সমর্থন করে। তবে তিনি এখনো সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে মন্তব্য করেননি।
এদিকে আয়াতুল্লাহ খামেনির চিঠি কেবল একটি রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং এটি ইরান-রাশিয়া সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি এবং ভবিষ্যতের কূটনৈতিক পথনির্দেশও। এখন দেখার বিষয়, পুতিন কতটা ইতিবাচকভাবে এই বার্তার জবাব দেন এবং তা ভবিষ্যতের মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতিকে কোন দিকে নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, কোনোপ্রকার উস্কানি ছাড়াই গত ১৩ জুন দিনগত রাত হঠাৎ ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা।
ইসরায়েলের হামলার পর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে শুক্রবার রাতে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ নামে’ অভিযান শুরু করে ইরান। তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে। এতে হতাহত কম হলেও ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
পিএ/টিকে